পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৩৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাক
২৫

আহার করে। ব্যক্তিগত বিবাদ ও দ্বন্দ্বযুদ্ধ মাঝে মাঝে হয় বটে, কিন্তু ব্যক্তিগত কলহ সামাজিক দলাদলিতে পরিণত হয় না।

 মাঝে মাঝে কনফারেন্স আহ্বান করিয়া সামাজিক আলোচনা ইহারা করে। আমাদের পাশের বাড়ীর একটা নিমগাছে প্রায়ই কাকের পঞ্চায়েৎ বসিত। কেহ যে সভাপতি হইত তাহা মনে হয় না। কেহ গাছে, কেহ বা তন্নিম্নে ছাদের উপর বসিত। এবং যাহাদের কিছু বক্তব্য থাকিত তাহারা শাখাগ্রে উড়িয়া গিয়া বসিয়া বক্তৃতা দিত এবং বক্তব্য শেষ হইলে নামিয়া আবার ছাদে আসিয়া বসিত। এইরূপে ২০-৩০ মিনিট বক্তৃতার পর সভা ভঙ্গ করিয়া যে যাহার কাজে চলিয়া যাইত। সন্ধ্যার প্রাক্‌কালে নিবাসবৃক্ষে যাইবার পূর্ব্বে কাক একবার “কাক স্নান” করিয়া লয়। নদীর কূলে বা অন্য কোনও জলাশয়তীরে একদল কাক গিয়া উপবেশন করে তারপর অতি ধীর পদক্ষেপে জলের নিকট যাইয়া মস্তকটি জলমধ্যে ক্ষিপ্রভাবে প্রবেশ করাইয়া পৃষ্ঠোপরি কিছু জল ছিটাইয়াই সরিয়া আসে তারপর চঞ্চুদ্বারা পালকগুলি পরিষ্কার করিয়া লয়। বহুবার তাহারা এইরূপ করে। তাহার পর সকলে মিলিয়া কোনও একটি উচ্চবৃক্ষে আশ্রয় লয়। কিছুক্ষণ রাত্রিবাসের স্থান লইয়া খুব খানিকটা কলহ বিতণ্ডা ঠেলাঠেলির পর সকলে নীরব হয়।

 পরস্পরের আপদে বিপদে কাকের সহানুভূতি খুব বেশী। কোনও কাকের অনিষ্টচেষ্টা করিলে, আশে পাশের সমস্ত কাক জড়ো হইয়া এমন অ্যাজিটেশন সুরু করিবে যে হয় আপনাকে অনিষ্ট চেষ্টা হইতে বিরত হইতে হইবে, নয় বিলাতি পদ্ধতি দ্বারা উহা ঠাণ্ডা করিতে হইবে। ছোটনাগপুরের প্রান্তিক একটি সহরে বাসকালে ঔদরিকভাবে পক্ষীতত্ত্বের গবেষণার্থ প্রায়ই বন্দুকস্কন্ধে পক্ষী সংগ্রহে বাহির হইতাম। বাসার অদূরে একটী পলাশবন দিয়া যাইবার সময় কখনও কখনও কাকের নজরে পড়িয়া যাইতাম। আমাকে দেখিলেই কলরব সুরু