পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৪৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।



কোকিল

 আমরা বাংলাদেশে যেদিন সরস্বতী পূজা করি, বাংলার বাহিরে আর্য্যাবর্ত্তের অন্যান্য স্থানে সেদিন “বসন্ত-পঞ্চমী” উদ্‌যাপিত হয়। এই দিন বসন্তোৎসবের আরম্ভ হয়, যাহার শেষ হয় ফাল্গুন পূর্ণিমায় হোলির দিন। বাঙ্গালীর হঠাৎ এদিনটাকে সরস্বতীপূজার জন্য কেন ধার্য্য করিয়াছেন তাহা গবেষণার বিষয়। বাস্তবিকপক্ষে ঐ দিবস হইতেই আবহাওয়ার পরিবর্ত্তন বেশ বোধগম্য হয়। শীতের তীক্ষ্ণতা চলিয়া গিয়া বাতাসে একটা হাল্কা ঝিরঝিরে ভাব অনুভূত হয়—অর্থাৎ দখিনা বাতাস মাঝে মাঝে আগমন-বার্ত্তা ঘোষণা করিতে আরম্ভ করে। কোকিলের রুদ্ধকণ্ঠকে সহসা মুক্তি দিয়া প্রকৃতিও ইহার ইঙ্গিত দেয়। বর্ষাকাল হইতেই কোকিলের ডাক শোনা যায় না। শোনা গেলেও তার তীব্রতা, মাধুর্য্য ও উচ্ছ্বাস থাকে না। শীতকালে কোকিলের কণ্ঠরব একান্ত নীরব থাকে। মনে হয় কোকিল বুঝি দেশের কোথাও নাই। কিন্তু বসন্ত-পঞ্চমী দিবসে (আমাদের সরস্বতী পুজা) বা তার ২।৪দিন অগ্রপশ্চাতে কোকিলের উচ্চ কুহুতান সহসা বনানী প্রকম্পিত করিয়া তোলে। ১৯২৫ সালে প্রথম আমি সরস্বতী পূজার দিন কোকিলের কণ্ঠস্বর শুনিয়া—ইহাকে সত্যসত্যই বসন্তের বার্ত্তাবহ বলিয়া বুঝিতে পারি। তারপর বহুবৎসর ধরিয়া আমি বসন্ত-পঞ্চমী দিবসের কয়েকটা দিন সর্ব্বদা উৎকর্ণ হইয়া থাকিতাম, এবং ঐ দিবসের ২।১দিন পূর্ব্বে বা পরে কোকিলের প্রথম কলধ্বনি শুনিতে পাইয়াছি। কোকিল যে বসন্তের বার্ত্তাবহ ইহা শুধু কবির কল্পনা নয়—প্রাকৃতিক সত্য।

 কোকিলের জীবনকাহিনীর দ্বারা পক্ষিতত্ত্বের কয়েকটি রহস্যের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়। কোকিল কাকের বাসায় ডিম পাড়িয়া কিরূপে