কৃষ্ণমস্তক তাম্রাভ বর্ণের যে শালিক আমাদের গৃহমধ্যে পর্য্যন্ত আসিয়া আমাদের সঙ্গে মিতালী করিতে প্রয়াস পায়, সে স্বয়ং নীড় নির্ম্মাণ করে না। গর্ত্তের মধ্যে বাসা নির্ম্মাণ করা ইহার অভ্যাস। কিন্তু গর্ত্ত খুঁড়িয়া বা খুঁদিয়া লইবার শ্রমস্বীকার সে করে না। কাঠঠোকরা বা বসন্ত-বাউরী পাখীর পরিত্যক্ত কোটর দখল করিয়া তন্মধ্যে শুষ্ক তৃণ, ছিন্ন বস্ত্রের টুকরা, ছোট ছোট কাঠি, পালক, কাগজের টুকরা প্রভৃতি দিয়া একটি গদী তৈয়ার করিয়া তদুপরি সে তাহার ডিম্ব রক্ষা করে। সাধারণতঃ ইহারা সুন্দর নীলবর্ণের ডিম্ব উর্দ্ধ সংখ্যা চারিটিকরিয়া পাড়ে।
শালিকের এই অপরের প্রস্তুত গর্ত্তে বাসা রচনা করার অভ্যাসের মধ্যে পক্ষিতত্ত্বের একটা গূঢ় রহস্যের আভাস পাওয়া যায়। বিখ্যাত প্রাণিতত্ত্ববিৎ সেলুস সাহেব আন্দাজ করেন যে পাখীর এই অপরের বাসা দখল করার অভ্যাস তাহার পরভৃত অবস্থায় বিবর্ত্তনের প্রথম ধাপ। কোকিল কিরূপ পরভৃত তাহা পূর্ব্বে বর্ণনা করিয়াছি। প্রশ্ন এই, কোকিল সৃষ্টির আদি হইতেই এইরূপ, না বিবর্তনের ফলে ঐরূপ হইয়াছে? সেলুস বলেন যে, প্রথম প্রথম পাখী পরের পরিত্যক্ত বাসাতেই ডিম পাড়িতে আরম্ভ করে। তাহাতে বাসা প্রস্তুত করিবার পরিশ্রম বাঁচিয়া যায়। এই অভ্যাসের ফলে পরিত্যক্ত নহে এরূপ অপর পাখীর বাসাতেও ডিম পাড়িয়া ফেলিত। পরে গৃহস্বামীর আগমনে সে বাসা হইতে বিতাড়িত হইলেও তাহার ডিম সেইখানেই থাকিয়া যাইত। ঐ গৃহস্বামী ডিমের পার্থক্য না বুঝিয়া সেই ডিম ফুটাইয়া বাচ্চাকে প্রতিপালিত করিত। কালক্রমে এই সহজ পন্থাটি তাহার স্বভাবগত হইয়া পড়ায় নীড় রচনা, সন্তান পালন প্রভৃতি দুরূহ কার্য্যের শ্রম হইতে সে মুক্তি পাইল। সেলুস সাহেবের আন্দাজ যদি সত্য হয় তবে আমরা সাধারণ শালিককে পরভৃত হওয়ার পথে প্রথম স্তরে দেখিতেছি। শালিক যে শুধু পরের পরিত্যক্ত বাসায় নিজ নীড় রচনা করে তাহানহে—একটু কষ্ট