পারে বিপদ উপস্থিত এবং সকলেই যেন একসঙ্গে চালিত হইয়া স্থান ত্যাগ করিয়া উঠিয়া পড়ে একথা পূর্ব্বেই লিখিয়াছি। সেনানায়কের নীরব বাহুর ইঙ্গিতে যেমন পদাতিক সৈন্যরা চালিত হয়, দলবদ্ধ পাখীরাও একজনের ইঙ্গিতে ঐক্যবদ্ধভাবে চলাফেরা করে। শালিকের ডানার সাদা রেখার তাৎপর্য্য এইভাবে পক্ষি-পণ্ডিতগণ ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু মাছরাঙা তো দলবদ্ধ হইয়া থাকে না, সুতরাং তাহার ডানার এই উজ্জ্বল শ্বেত রেখাটী প্রকৃতি কি শুধু খেয়াল বশতঃই বিন্যস্ত করিয়াছে? ইহার উত্তর পাওয়া যায় নাই।
নীলকণ্ঠ পাখীর ধরণধারণে যেমন অনেকে সন্দেহ করেন যে সে এক কালে মাছরাঙা ছিল, এই শ্বেতবক্ষ মাছরাঙাটিকে দেখিলে সে সন্দেহ ঘনীভূত হয়। এই মাছরাঙাটীও বিবর্ত্তনের পথে নিজ জাতীয়তা হারাইতে বসিয়াছে। প্রাণিজগতে বিবর্ত্তন অল্পে অল্পে, এত দীর্ঘ দিন ধরিয়া চলে যে, অভিনিবেশ সহকারে লক্ষ্য না করিলে উহা ধরা যায় না। এই পাখীটীকে লক্ষ্য করিলে ইহার চরিত্রে মাছরাঙা-বিরুদ্ধ কতকগুলি লক্ষণ দেখা যাইবে। যে পাখী মাছ খাইয়াই বাঁচে, তাহার তো জলের ধারেই থাকার কথা। কিন্তু এই সাদা-বুক মাছরাঙাটী এমন বাগানেও থাকে যার ত্রিসীমানায় জল নাই। কলিকাতা সহরে আমহার্ষ্ট ষ্ট্রীটের আম্স হাউসের (এখন যেখানে থানা) অভ্যন্তরে বৃক্ষাগ্রে বসিয়া ইহাকে তারস্বরে চিৎকার করিতে দেখিয়াছি। বুঝা যাইতেছে যে একমাত্র মাছদ্বারা প্রাণটাকে বাঁচাইয়া রাখার অভ্যাস সে পরিত্যাগ করিতেছে। জলের ধারেও যখন সে শীকার খোঁজে তখন সে কদাচিৎ কষ্ট করিয়া শরীর ভিজাইয়া মাছ ধরে। তখনও পাড়ে যে সব ছোট ছোট ভেক বসিয়া থাকে, সেইগুলির প্রতিই ইহার লোভ দেখা যায়। আবার নীলকণ্ঠের মত মাঠে ঘাসের উপর আসিয়া উপবেশন পূর্ব্বক কীটাদি খুঁটিয়া খাইতেও ইহাকে দেখা গিয়াছে।