পাখীর তাহা আমরা বলিতে পারি। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন হাঁড়িচাচার ভিন্ন ভিন্ন রকমের—সাদা, ধূসর, ফিকে গোলাপী, সবুজ প্রভৃতি ডিম পাওয়া গিয়াছে। পক্ষিতত্ত্ববিৎ সুধীগণ এখনও এইরূপ পার্থক্যের কোনও কারণ নির্দেশ করিতে পারেন নাই। বৈশাখ হইতে আষাঢ়ের মধ্যভাগ পর্য্যন্ত ইহাদের প্রজননকাল। ছোট বাচ্চাগুলি দেহে পালক গজাইবার সঙ্গে সঙ্গেই বাপ মায়ের বর্ণ প্রাপ্ত হয়। সব পাখীদের ক্ষেত্রে তাহা হয় না, পূর্ণবয়স্ক পাখীর দেহবর্ণ পাইতে একটু দেরী লাগে। ইহাদের শাবকগুলিও অত্যন্ত পেটুক হয় এবং খাবারের জন্য অহরহ চিৎকার করে। পক্ষিতত্ত্ববিৎ শ্রীযুক্ত সত্যচরণ লাহা মহাশয় একবার আগরপাড়ায় এক হাঁড়িচাচার বাসা হইতে দুইটি শাবক অপহরণ করিয়া আনিয়া খাঁচায় পূরিয়া রাখেন। তাহার ভৃত্য অবশ্য নিয়মমত ঘড়ির কাঁটা ধরিয়া ইহাদের খাওয়াইত। কিন্তু মানুষ দেখিলেই ইহারা এরূপ তারস্বরে চিৎকার ও সশব্দ অনুনয় করিত যে ইহাদিগের মুখে কিছু না দিয়া খাঁচার পাশ দিয়া হাঁটা যাইত না। বাগানের মধ্যে ইহারা যে ভাবে গলাবাজী করিতে করিতে ডানা ঝাপটাইয়া পিতামাতার অনুসরণ করে ও খাদ্যের জন্য অনুনয় জানায়, তাহা দেখিবার মত। আশ্চর্য্য, ইহাদের পিতামাতার কখনও ধৈর্য্যচ্যুতি হয় না। সারা বর্ষাকালটা ইহারা এইরূপ করিয়া পিতামাতার পিছনে পিছনে ফেরে। বর্ষাকালে পোকা মাকড়ের অভাব হয় না, সুতরাং ইহাদের বাপমাও আব্দার সহ্য করিয়া আহার জোগায়। কিন্তু শরতের আগমনে পাখীদের গৃহস্থালী ভাঙ্গিবার সময় হয়। পশুদের মধ্যে অপত্যস্নেহ খুব স্বল্পকালস্থায়ী। যতক্ষণ উহা বর্ত্তমান থাকে, ততক্ষণ উহা অত্যন্ত প্রবল। সন্তান বিপন্ন ভাবিলে পিতামাতা নিজ জীবন তুচ্ছ করিয়া আততায়ীকে যুদ্ধ প্রদান করে। কিন্তু সন্তান যখন বড় হয়, আত্মরক্ষা করিতে
পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৮৯
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭২
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী