সুবৃহৎ বৃক্ষসমন্বিত বনানী বা কানন—যেখানে খুব ঘন, সেইখানে বড় বড গাছে পত্রবীথির অন্তরালে উজ্জ্বল হল্দে রঙের একটি লাজুক পাখী প্রায়ই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। এরূপ বর্ণাঢ্য পাখী বাংলার পল্লীকাননে খুব কম আছে। ইহার দেহের পীতবর্ণ অত্যন্ত গাঢ় ও উজ্জ্বল তৎসঙ্গে স্থানে স্থানে ঘনকৃষ্ণবর্ণের সমাবেশ থাকায় হল্দে ভাগ আরও সুস্পষ্ট মনে হয়। ইহার বাংলা নাম স্থান বিশেষে “কৃষ্ণগোকুল,” “বেনে-বউ,” “খোকা-হোক” প্রভৃতি। ইংরেজ একে “ওরিওল” বলে। হুপো ও কাঠঠোকরাকে বাদ দিলে “হল্দে পাখীর” মত বর্ণসুষমায় উজ্জ্বল পাখী বোধহয় বাংলার পল্লীপ্রান্তরে আর নাই।
শুধু যে বর্ণসুষমায় এই পাখী মনোহর তাহা নহে, ইহার ডাকটিও খুব মিষ্ট। ইহার কণ্ঠে দোয়েলের মত স্বরের ধারা নাই; কয়েকটি হ্রস্ব লঘুস্বর মাত্র ইহার কণ্ঠ হইতে নিঃসৃত হয়। এই স্বরটী শুনিতে “খোকা-হোক” বলিয়া মনে হয়, সেইজন্য কোনও কোনও অঞ্চলে ইহাকে “খোকা-হোক” পাখী বলা হয়।
এই পাখী ফলভূক এবং ইহা উচ্চ বৃক্ষমধ্যে থাকে বলিয়া ভূমির উপর ইহাকে কখনও দেখা যায় না। ইহারা লোকালয় মধ্যে বাস করিলেও অত্যন্ত লাজুক। কেহ লক্ষ্য করিতেছে অনুভব করিলেই ঘন পাতার আড়ালে আত্মগোপন করে। তবে এক বৃক্ষ হইতে অন্য বৃক্ষে যখন উড়িয়া যায় তখন ইহাদের দেহের বর্ণচ্ছটায় বাগান যেন আলো করিয়া যায়। ইহারা খুব সামাজিক পাখী নহে সেইজন্য এক জোড়া ভিন্ন অধিকসংখ্যক পাখী একত্র চলাফেরা করে না। কিন্তু তাই