রোহিতাশ্ব দুর্গে আবিষ্কৃত শিলালিপি হইতে অবগত হওয়া যায় যে, শশাঙ্ক প্রথমে সম্পূর্ণ রাজোপাধি গ্রহণ করেন নাই এবং দক্ষিণ-মগধ তাঁহার অধিকারভুক্ত ছিল। ইউয়ান্-চোয়াঙের ভ্রমণ-বৃত্তান্ত হইতে জানিতে পারা যায় যে, তিনি কর্ণসুবর্ণের অধিপতি ছিলেন। কর্ণসুবর্ণের বর্ত্তমান নাম রাঙ্গামাটী ইহা মুর্শিদাবাদ জেলার প্রধান নগর বহরমপুরের দক্ষিণে অবস্থিত[১]। হর্ষচরিত অনুসারে শশাঙ্ক গৌড়াধিপতি, গৌড় বলিতে উত্তর-বঙ্গ বুঝায়; সুতরাং মগধ, গৌড় ও রাঢ়দেশ শশাঙ্কের অধিকারভুক্ত ছিল, ইহা সকলকেই স্বীকার করিতে হইবে। শশাঙ্কের অপর নাম নরেন্দ্রগুপ্ত[২]। হর্ষচরিতের একখানি পুথিতে নরেন্দ্রগুপ্ত নামের উল্লেখ আছে। এতদ্ব্যতীত হর্ষচরিতের টীকাকার ষষ্ঠ উচ্ছ্বাসের টীকায় এই কথা স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। নরেন্দ্রগুপ্ত নাম দেখিলে বোধ হয় যে, তিনি গুপ্তবংশীয় নরপতি ছিলেন। গুপ্তনামধারী অভিজাতকুলজ কোন ব্যক্তি কর্ত্তৃক রাজ্যবর্দ্ধনের মৃত্যুর পরে কান্যকুব্জ অধিকারের উল্লেখ দেখিয়া পূর্ব্বোক্ত অনুমান যথার্থ বলিয়া বোধ হয়। তাঁহার যে সমস্ত মুদ্রা শশাঙ্ক নামে মুদ্রাঙ্কিত, তৎসমুদয়ের এক পার্শ্বে নন্দীর পৃষ্ঠে উপবিষ্ট মহাদেবের মূর্ত্তি ও অপর পৃষ্ঠে পদ্মাসনে সমাসীনা লক্ষ্মীর মূর্ত্তি আছে[৩]। প্রাচীন গুপ্তরাজবংশের সুবর্ণমুদ্রাসমূহের সহিত তুলনা করিলে দেখিতে পাওয়া যায় যে, দুই একটি বিষয়ে পার্থক্য থাকিলেও শশাঙ্কের মুদ্রার সহিত প্রাচীন গুপ্তরাজবংশের সুবর্ণমুদ্রার বিশেষ সাদৃশ্য আছে। প্রথমতঃ মুদ্রার দ্বিতীয় পৃষ্ঠে কমলাত্মিকা-মূর্ত্তি, দ্বিতীয়তঃ মুদ্রার প্রথম পৃষ্ঠে রাজার নাম লিখনের পদ্ধতি, গুপ্তমুদ্রার
পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১২৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
বাঙ্গালার ইতিহাস।