পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ।
১০৫

সহিত শশাঙ্কের মুদ্রার তুলনা করিলে এই দুইটি সাদৃশ্য দেখিতে পাওয়া যায়। প্রাচীন গুপ্তসম্রাট্‌গণ ভাগবতমতাবলম্বী অর্থাৎ বৈষ্ণব ছিলেন; কিন্তু শশাঙ্ক শৈব ছিলেন, সেই জন্যই বোধ হয়, তাঁহার মুদ্রায় বৃষভবাহন মহাদেবের মূর্ত্তি দেখিতে পাওয়া যায়। অধিকাংশ গুপ্তবংশীয় সম্রাটগণের মুদ্রায় রাজার নাম লিখনকালে একটি অক্ষরের নিম্নে আর একটি অক্ষর অঙ্কিত হইত, শশাঙ্কের মুদ্রাতেও এই লক্ষণ দেখিতে পাওয়া যায়। যশোহর জেলায় মহম্মদপুর গ্রামে ও অজ্ঞাত স্থানে প্রাপ্ত যে দুইটি মুদ্রা কলিকাতার চিত্রশালায় আছে, তাহাদিগের দ্বিতীয় পৃষ্ঠে যে খোদিতলিপি আছে, কোন পণ্ডিতের মতে তাহার প্রকৃত পাঠ নরেন্দ্রাদিত্য। ইহা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে নরেন্দ্রাদিত্য শশাঙ্কের “আদিত্য” নাম ছিল। সমুদ্রগুপ্ত ব্যতীত অন্যান্য গুপ্তরাজগণের এইরূপ আদিত্য নাম ছিল দেখিতে পাওয়া যায়[১]। যথা:—চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য, কুমারগুপ্ত মহেন্দ্রাদিত্য, স্কন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য, নরসিংহগুপ্ত বালাদিত্য, চন্দ্রগুপ্ত দ্বাদশাদিত্য ইত্যাদি।

 শশাঙ্কের রাজ্য ও তাঁহার বংশপরিচয় সম্বন্ধে যে সমস্ত প্রমাণ লিপিবদ্ধ হইল, তাহা হইতে অনুমান হয় যে, তিনি মগধের গুপ্তবংশজাত ছিলেন এবং মহাসেনগুপ্তের পুত্র অথবা ভ্রাতুষ্পপুত্র ছিলেন। মগধের গুপ্তরাজবংশ সম্ভবতঃ সম্রাট্ দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কনিষ্ঠ পুত্র গোবিন্দগুপ্ত হইতে উৎপন্ন। গুপ্ত-সাম্রাজ্যের শেষ দশায় গুপ্তবংশের কোনও ব্যক্তি মালব অধিকার করিয়া একটি নূতনরাজ্য স্থাপন করিয়াছিলেন। মালবের গুপ্তরাজগণ খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভ পর্য্যন্ত মালবে স্বীয় অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, তবে তাঁহারা যশোধর্ম্মদেব অথবা প্রভাকরবর্দ্ধন ও হর্ষবর্দ্ধন প্রভৃতি প্রবল রাজগণের অধীনতা

  1. Ibid, p. liii.