দেবগুপ্তের পরাজয়ের পরে রাজ্যবর্দ্ধনের সহিত শশাঙ্কের সাক্ষাৎ হইয়াছিল। হর্ষবর্দ্ধনের তাম্রশাসনদ্বয়ে দেখিতে পাওয়া যায় যে, রাজ্যবর্দ্ধন সত্যানুরোধে অরাতি-ভবনে গমন করিয়া প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন[১]। হর্ষচরিতে দেখিতে পাওয়া যায় যে, গৌড়াধিপ তাঁহাকে নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যা করিয়াছিলেন। বাণভট্ট স্থাণ্বীশ্বরের রাজবংশের অনুগ্রহপ্রার্থী ছিলেন এবং ইউয়ান্-চোয়াং হৰ্ষবর্দ্ধনের নিকট হইতে নানাবিধ সাহায্য ও উপহার পাইয়াছিলেন। এতদ্ব্যতীত চীনদেশীয় শ্রমণ ঘোরতর ব্রাহ্মণবিদ্বেষী ছিলেন, এই জন্যই রাজ্যবর্দ্ধনের মৃত্যু সম্বন্ধে তাঁহার উক্তি বিশ্বাসযোগ্য নহে। যিনি অনায়াসে মালবাধিপকে পরাজিত করিয়াছিলেন ও একাকী দুর্গম পার্ব্বত্য-প্রদেশে দুর্দ্ধৰ্ষ হূণজাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিয়াছিলেন, তিনি যে একাকী নিরস্ত্র অবস্থায় শক্র-ভবনে গমন করিবেন, ইহা বিশ্বাসযোগ্য উক্তি নহে। রাজ্যবর্দ্ধন মালবরাজকে পরাজিত করিয়া লুণ্ঠনলব্ধ দ্রব্যাদি ভণ্ডীর সহিত স্থাণ্বীশ্বরে প্রেরণ করিয়াছিলেন। ইহার পরই শশাঙ্ক বোধ হয়, তাঁহাকে বহু সৈন্য লইয়া আক্রমণ করিয়াছিলেন এবং অনুমান হয় যে, যুদ্ধে পরাজিত ও বন্দী হইয়া রাজ্যবর্দ্ধন অবশেষে নিহত হইয়াছিলেন। রাজ্যবর্দ্ধনের মৃত্যুর পরে শশাঙ্ক কি জন্য স্থাণ্বীশ্বর আক্রমণ করেন নাই, তাহা বলিতে পারা যায় না। রাজ্যবর্দ্ধনের কনিষ্ঠ ভ্রাতা হর্ষবর্দ্ধন সিংহাসনে আরোহণ করিয়া প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন যে, তিনি যত দিন তাঁহার ভ্রাতার শত্রুগণকে শাস্তি দিতে না পরিবেন, তত দিন তিনি দক্ষিণ হস্ত দ্বারা
- ↑
রাজানো যুধি দুষ্টবাজিন ইব শ্রীদেবগুপ্তাদয়ঃ।
কৃতা যেন কশাপ্রহারবিমুখাঃ সর্ব্বে সমং সংযতাঃ॥
উৎখায় দ্বিষতো বিজিত্য বসুধাং কৃত্বা প্রজানাং প্রিয়ং
প্রাণানুজ্ঝিতবানরাতিভবনে সত্যানুরোধেন যঃ॥
—Epigraphia Indica, Vol, I, p. 72, Vol, VI, p. 210.