পুরোহিতগণ দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিলেন, গৌড়বাসিগণ তখন রজত-নির্ম্মিত রামস্বামীর মূর্ত্তিকে পরিহাসকেশবের মূর্ত্তিভ্রমে চূর্ণ করিতেছিল। ইতিমধ্যে শ্রীনগর হইতে সৈন্য আসিয়া তাহাদিগকে আক্রমণ করিল, কিন্তু গৌড়ীয় বীরগণ সেদিকে দৃক্পাত না করিয়া মূর্ত্তিধ্বংসে ব্যাপৃত রহিল এবং একে একে সকলেই নিহত হইল। কহ্লনের সময়েও (খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে) রামস্বামীর মন্দির শূন্য ছিল এবং কাশ্মীরদেশ গৌড়বীরগণের যশে পরিপূর্ণ ছিল। শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ, কহ্ললনমিশ্র কর্ত্তৃক লিপিবদ্ধ গৌড়ীয়গণের বীরত্বকাহিনী অমূলক মনে করেন না, এবং বলেন যে প্রচলিত জনশ্রুতি অবলম্বনেই কহ্লন এই বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া থাকিবেন।[১]। কিন্তু কহ্ললন কর্ত্তৃক লিপিবদ্ধ ললিতাদিত্যের দক্ষিণাপথ বিজয়কাহিনী কিঞ্চিৎ পরিমাণে কল্পনাপ্রসূত বলিয়া মনে করিতে তিনি কোন দ্বিধাবোধ করেন নাই[২]। একই গ্রন্থকার কর্ত্তৃক লিখিত, একই গ্রন্থে একই বিষয়ে, অন্য প্রমাণাভাবে এক অংশ অমূলক ও দ্বিতীয় অংশ সত্যরূপে গ্রহণ করা ইতিহাস-রচনার বিজ্ঞান-সম্মত প্রণালী নহে। রাজতরঙ্গিণীর অনুবাদকর্ত্তা সার অরেল ষ্টাইন (Sir Aural Stein), ললিতাদিত্য কর্ত্তৃক কান্যকুব্জ বিজয় ব্যতীত, কহ্লন-বর্ণিত অন্য কোন ঘটনা সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে প্রস্তুত নহেন[৩]; এবং ইহাই বোধ হয় প্রকৃত ইতিহাস।
পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
১৩১