নিকটে বিজয়সেনের একখানি নূতন তাম্রশাসন আনিয়াছিলেন, ইহা বল্লালসেনের পিতা বিজয়সেনের ৩১ বা ৩৬ রাজ্যাঙ্কে প্রদত্ত হইয়াছিল। এই তাম্রশাসন হইতে অবগত হওয়া যায় যে, বল্লালসেনের মাতা বিলাসদেবী শূরবংশের কন্যা এবং বল্লালসেন স্বয়ং শূরবংশের দৌহিত্র। আদিশূর সম্বন্ধে কুলগ্রন্থের যে সমস্ত বচন অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহা পর্য্যালোচনা করিলে দেখিতে পাওয়া যায়, সেনরাজগণ আদিশূরের দৌহিত্র-বংশজাত—
(ক) জাতো বল্লালসেনো গুণিগণগণিতস্তস্য দৌহিত্রবংশে
(খ) আদিশূরাৎ কুলে জাতা পুরুষাৎ সপ্তমাৎ পরম্।
কন্যকা সুন্দরী সাধ্বী নাম্না শ্রীঃ শ্রীরিব শুভা॥
(গ) আসীৎ গৌড়ে মহারাজ আদিশূরঃ প্রতাপবান্।
তদাত্মজা-কুলে জাতো বল্লালাখ্যো মহীপতিঃ॥
(ঘ) যতী জগদ্রাজজয়ীশবর্য্য ঐশ্বর্য্যশৌর্য্যার্জ্জববীর্য্যভাজী।
অপূর্ব্বভক্তির্ভবদেবদেবেষ্ববেদ শশাঙ্কস্মররন্ধ্রশাকে॥
জাতো বিজয়সেনো গুণিগণগণিতস্তস্য দৌহিত্রবংশে।
পুণ্যাত্মা দ্বেষশূন্যো ধরণীপতিগণৈঃ পূজ্যমানপ্রধানঃ॥
বিজয়সেনের তাম্রশাসনে যখন দেখিতে পাইতেছি যে, বল্লালসেন স্বয়ং শূরবংশের দৌহিত্র ছিলেন, তখন—
(ক) তিনি কখনই আদিশূরের দৌহিত্র-বংশজাত হইতে পারেন না।
(খ) তাঁহার মাতার নাম শ্রী নহে, কিন্তু তাঁহার মাতা বিলাসদেবীই শূরবংশের কন্যা।
পূর্ব্বোক্ত প্রমাণানুসারে সাধারণতঃ কুলশাস্ত্রের প্রমাণগুলি অসত্য বলিয়া বোধ হয়। অনুমান হয় যে, প্রাচীন জনপ্রবাদ লইয়া কুলশাস্ত্র রচিত হইয়াছিল। শ্যামলবর্ম্মার সময়ে বঙ্গে বৈদিক ব্রাহ্মণগণ আগমন করিয়াছিলেন। দনুজমর্দ্দনদেব চন্দ্রদ্বীপ-রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। আদিশূরের সময়ে বঙ্গে রাঢ়ীয় ও বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণ আগমন করিয়াছিলেন। এই সকল জনপ্রবাদ ব্যতীত কুলশাস্ত্রে প্রাচীনকালে বংশপরম্পরা ও বিবাহ-সম্বন্ধ ব্যতীত অন্য কোন বিষয় বর্ণিত হইয়াছিল বলিয়া বোধ হয় না। বর্ত্তমান সময়ে কুলশাস্ত্রসমূহে রাশি রাশি ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়, কিন্তু নূতন ঐতিহাসিক আবিষ্কারের আলোকে তৎসমুদয় “প্রক্ষিপ্ত” প্রমাণ হইতেছে। এইজন্য গ্রন্থমধ্যে কুলশাস্ত্রোদ্ধৃত কোন বচন প্রমাণস্বরূপ গৃহীত হইল না।