ঘনরামের ধর্ম্মমঙ্গল ইহার বহু পরে রচিত হইয়াছিল। গোপালদেবের পুত্র ধর্ম্মপালদেবের রাজত্বকালে হরিভদ্র ‘অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতার’ টীকায় বলিয়া গিয়াছেন যে, ধর্ম্মপাল “রাজভটাদিবংশপতিত[১]।” হরিভদ্র ধর্ম্মপালদেবের সমসাময়িক ব্যক্তি; সুতরাং তাঁহার উক্তি সন্ধ্যাকরনন্দীর রামচরিত, ঘনরামের ধর্ম্মমঙ্গল ও বৈদ্যদেবের কমৌলী তাম্রশাসনাপেক্ষা অধিকতর প্রামাণিক হওয়া উচিত। শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসুর মতানুসারে ধর্ম্মপাল বঙ্গের খড়্গবংশীয় রাজা দেবখড়্গের পুত্র রাজরাজভট্টের বংশজাত। বসুজ মহাশয় বলিয়াছেন,—“এই কয়টি
- ↑ বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, রাজন্যকাণ্ড, পৃঃ ১৪৭। হরিভদ্রের ‘অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা-টীকায়’ ধর্ম্মপালদেব সম্বন্ধে ‘রাজভটবংশপতিত’ শব্দটি আছে, এই সংবাদ শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর নিকট পাইয়াছিলেন। নেপালে কাঠমণ্ডু নগরে ‘বীর লাইব্রেরী’ নামক গ্রন্থাগারে হরিভদ্র-বিরচিত ‘অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা-টীকার’ একখানি প্রাচীন পুথি আছে, পুথিখানি তালপত্রে লিখিত এবং মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের মতানুসারে পুথিখানির বয়স সাত আট শত বৎসর হইবে। এই গ্রন্থের দ্বাত্রিংশ অধ্যায়ের শেষে নিম্নলিখিত শ্লোকটি লিখিত আছে;—
রাজ্যে রাজভটাদিবংশপতিত শ্রীধর্ম্মপালস্য বৈ।
তত্ত্বালোকবিধায়িনী বিরচিতা সৎপঞ্জিকেয়ং ময়া॥অভিসময়ালঙ্কারাবলোকেত্যষ্টসাহস্রিকাপ্রজ্ঞাপারমিতা ব্যাখ্যা সমাপ্তা। কৃতিরিয়ং আচার্য্যহরিভদ্রপাদানাং।
মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী অনুমান করেন যে, ‘রাজভটাদিবংশপতিত’ শব্দে রাজভট প্রভৃতির সহিত পালবংশের অতি দূর-সম্পর্ক সূচিত হয়। কিন্তু ইহার অর্থে গোপাল বা ধর্ম্মপালকে রাজভটের বংশধর বলা যাইতে পারে না। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রামচরিত সম্পাদনকালে বলিয়াছেন যে, পালরাজগণ সম্ভবতঃ রাজভটের কোন সেনাপতির বংশজাত; Dharmapala is described by Haribhadra as belonging to the family of a military officer of the same king.—Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. III, p. 6.