পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
বাঙ্গালার ইতিহাস।

না, সুতরাং সেঙ্গ-চি-বর্ণিত রাজভট স্বতন্ত্র ব্যক্তি। হরিভদ্রের অষ্টসাহস্রিকাপ্রজ্ঞাপারমিতার টীকার ‘রাজভটাদিবংশপতিত’ শব্দের যে ‘রাজভটের বংশপ্রসূত’ অর্থ হইবে, ইহার কিছু নিশ্চয়তা নাই। ‘রাজভট-বংশপতিত’ শব্দে রাজভৃত্যবংশোদ্ভব বুঝাইলেও বুঝাইতে পারে। গোপালদেব যদি সমতট বা বঙ্গের বিখ্যাত রাজবংশপ্রসূত হইতেন, তাহা হইলে তাঁহার পুত্রের এবং বংশধরগণের প্রশস্তি-রচয়িতৃগণ উচ্চকণ্ঠে বহু শব্দাড়ম্বরের সহিত পালবংশের পূর্ব্ব-গৌরব কীর্ত্তন করিতেন। ভারতের ইতিহাসে এরূপ দৃষ্টান্ত বিরল নহে। বাতাপীপুরের চালুক্যবংশের সাম্রাজ্য ৬৫৩ খৃষ্টাব্দে রাষ্ট্রকূটরাজ দন্তিদুর্গ কর্তৃক অধিকৃত হইয়াছিল[১]। দন্তিদুর্গ হইতে দ্বিতীয় কর্কের রাজ্যকাল পর্য্যন্ত চালুক্যরাজগণ সামান্য সামন্তে পরিণত হইয়াছিলেন, কিন্তু কল্যাণের চালুক্যবংশীয় দ্বিতীয় তৈল পিতৃরাজ্যোদ্ধার করিয়াছিলেন[২]। কৌঠেম গ্রামে আবিষ্কৃত তাঁহার বংশধর পঞ্চম বিক্রমাদিত্য ত্রিভুবনমল্লের তাম্রশাসনে প্রাচীন চালুক্য-বংশের সুদীর্ঘ পরিচয় প্রদত্ত হইয়াছে[৩]। ধর্ম্মপাল, দেবপাল প্রভৃতি পালবংশীয় সম্রাট্‌গণের তাম্রশাসনসমূহে দেবখড়্গাদির উল্লেখের অভাব দেখিয়া স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, খড়্গবংশের সহিত পালবংশের কোনই সম্পর্ক ছিল না। শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু বলেন যে, “শ্রিয় ইব সুভগায়াঃ সম্ভবো বারিরাশিঃ”[৪] এবং “শ্লাঘা পতিব্রতাসৌ মুক্তারত্নং সমুদ্রসূক্তিরিব”[৫] প্রভৃতি শ্লোকে পালবংশের সিন্ধু হইতে

  1. Bhandarkar’s Early History of the Dekkan, p. 62.
  2. Ibid, p. 79.
  3. কৌঠেম গ্রামে আবিষ্কৃত চালুক্যরাজ পঞ্চম বিক্রমাদিত্য ত্রিভুবনমল্লের তাম্রশাসন।—Indian Antiquary, Vol. XVI, 21.
  4. গৌড়লেখমালা, পৃঃ ১১।
  5. গৌড়লেখমালা, পৃঃ ৩৭।