পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পরিচ্ছেদ।
১৬৯

কাহিনী সম্পূর্ণ সত্য নহে, কারণ পালরাজগণের তাম্রশাসন-সমূহে দেখিতে পাওয়া যায় যে, দেবপাল ধর্ম্মপালের পুত্র। এতদ্ব্যতীত ত্রিভুবনপাল নামক ধর্ম্মপালের আর এক পুত্র ছিল[]

 ঘনরামের ধর্ম্মমঙ্গলে সমুদ্রের ঔরসে ধর্ম্মপালের পত্নী বল্লভাদেবীর গর্ভে অজ্ঞাতনামা পুত্রের উৎপত্তি কাহিনী দেখিয়া বোধ হয় যে, ঘনরাম কর্ত্তৃক ধর্ম্মমঙ্গল-রচনাকালে সমুদ্রকুলে পালরাজগণের উৎপত্তি সম্বন্ধে বিকৃত জনশ্রুতি বা প্রবাদ প্রচলিত ছিল। সন্ধ্যাকরনন্দী-বিরচিত রামচরিতে সমুদ্রকুলে ধর্ম্মপালের উৎপত্তির কথা স্পষ্টভাবে উল্লিখিত না থাকিলে কেবল ঘনরামের উপরে বিশ্বাস করিয়া পালবংশের উৎপত্তি-বর্ণনা বিজ্ঞান-সম্মত হইত না; কিন্তু খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে রচিত গ্রন্থে এবং অন্যূন সপ্তশত বর্ষের পুরাতন পুথিতে যখন এই কথার উল্লেখ পাওয়া যায়, তখন সমুদ্রকুলে পালরাজগণের উৎপত্তি সম্বন্ধে কোন সন্দেহই থাকিতে পারে না। পূর্ব্বে কথিত হইয়াছে যে, রামপালদেবের পুত্র কুমারপালদেবের মন্ত্রী ও সেনাপতি কামরূপরাজ বৈদ্যদেবের তাম্রশাসনে সূর্য্যবংশে পালরাজগণের উৎপত্তি-কথা দেখিতে পাওয়া যায়[]

    অপুত্রক মহারাজ অখিলে প্রকাশ।
    বিশেষ ব্রাহ্মণ বিষ্ণু বৈষ্ণবের দাস॥
    পূর্ব্বাপর পাটে রাজা ঐ গৌড় পুরী।
    ধর্ম্মশীলা রাণী তার ভ(ব)ল্লভা সুন্দরী॥
    বনবাসে তখন আছিল সেই সতী।
    তার সঙ্গে সমুদ্র সম্ভোগ কৈল রতি॥
    গৌড়পতি তোমার জনম নিলা হায়।

  1. গৌড়লেখমালা, পৃঃ ২৬।
  2. এতস্য দক্ষিণদৃশো বংশে মিহিরস্য জাতবান্ পূর্ব্বং।
    বিগ্রহপালোনৃপতিঃ সর্ব্বাকারর্দ্ধি সংসিদ্ধঃ॥
    —বৈদ্যদেবের কমৌলি তাম্রশাসন, ২য় শ্লোক,—গৌড়লেখমালা, পৃঃ ১২৮।