বৈদ্যদেবের প্রশস্তিকার বোধ হয় পালরাজগণের পূর্ব্বপরিচয় সম্যক্রূপে অবগত ছিলেন না, এবং হয়ত পালরাজগণের সমুদ্রকুলে উৎপত্তির কথা কখনও তাঁহার শ্রুতিগোচর হয় নাই। সন্ধ্যাকরনন্দী গৌড়বাসী এবং পালরাজগণের বেতনভোগী কর্ম্মচারীর পুত্র, সুতরাং পালরাজবংশের প্রকৃত পরিচয় তাঁহারই জানা সম্ভব। বৈদ্যদেবের তাম্রশাসনে পালরাজগণের সূর্য্যবংশে উৎপত্তির বিবরণ নিঃসন্দেহ বৈদ্যদেবের প্রশস্তিরচয়িতা মনোরথের অজ্ঞতার ফল। বৈদ্যদেবের তাম্রশাসন ও সন্ধ্যাকরনন্দীর “রামচরিত” প্রায় তুল্য কালের রচনা। সমসাময়িক রচনায় এইরূপ মতদ্বৈধ নিশ্চয়ই একজন রচয়িতার অজ্ঞতা অথবা ভ্রমের ফল। এইস্থানে সন্ধ্যাকরনন্দীর সহিত মনোরথের তুলনা করিয়া সন্ধ্যাকরনন্দীকে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য বলিয়া স্বীকার করিতে হয়, কারণ তিনি পৌণ্ড্রবর্দ্ধনপুরের অধিবাসী ছিলেন এবং তাঁহার পিতৃপুরুষগণ পালসাম্রাজ্যে উচ্চ রাজপদের অধিকারী ছিলেন। আকবরের সুহৃদ ইতিহাসবেত্তা আবুল-ফজলের উক্তির উপরে সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করিয়া কেহ কেহ গৌড়-বঙ্গ-মগধের পালরাজগণকে কায়স্থ অনুমান করিয়া বিষম ভ্রমে পতিত হইয়াছেন[১]। আবুল-ফজলের উক্তি, বিশেষতঃ প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে, অতি সাবধানে গ্রহণ করা উচিত। তিনি আকবরের সমসাময়িক ব্যক্তি, কিন্তু তৎসত্ত্বেও আকবরের সম্বন্ধে তাঁহার সমস্ত
- ↑ শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয় তাঁহার “বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস”, রাজন্যকাণ্ডে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন,—বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, রাজন্যকাণ্ড, পৃঃ ১৫১।