পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪
বাঙ্গালার ইতিহাস।

আদিম মানবকে জীবনযাত্রানির্ব্বাহের জন্য পশুহত্যার উপযোগী আয়ুধ অন্বেষণে প্রবৃত্ত হইতে হইয়াছিল। আদিম মানব তখনও কৃত্রিম উপায়ে অগ্ন্যুৎপাদন করিতে শিক্ষা করে নাই, সুতরাং ধাতুর ব্যবহার অজ্ঞাত ছিল। এই যুগবিপ্লবের সময়ে, আমাদের পূর্ব্বপুরুষগণ যে আয়ুধ বা প্রহরণ সংগ্রহ করিয়াছিলেন, তাহা তীক্ষ্ণধার প্রস্তরখণ্ড মাত্র।

 মানবজাতির সর্ব্বপ্রাচীন অস্ত্র, ভূপৃষ্ঠে অন্বেষণলব্ধ, প্রস্তরখণ্ডের বর্ত্তমান নাম প্রাগায়ুধ (Eolith)[১]। ইহাতে মানবের শিল্পের কোন নিদর্শন নাই, এই জন্য কোন কোন ভূতত্ত্ববিদ্ ইহা আদিম মানব কর্ত্তৃক ব্যবহৃত অস্ত্র নহে বলিয়া সন্দেহ করেন। আদিম মানবগণ প্রাগায়ুধ হস্তে ধারণ করিয়া মৃগয়ায় প্রবৃত্ত হইতেন এবং আমমাংস ভক্ষণ করিয়া জঠরজ্বালা নিবৃত্তি করিতেন। ক্রমশঃ জ্ঞানবৃদ্ধির সহিত ভল্ল বা বর্ষার ব্যবহার আরম্ভ হয়। যুগবিপ্লবের বহুকাল পরে, আদিম মানবগণ ভূপৃষ্ঠলব্ধ প্রস্তরখণ্ডের অগ্রভাগ, দ্বিতীয় প্রস্তরের আঘাতে তীক্ষ্ণতর করিয়া, তাহা দণ্ডের অগ্রভাগে, বনজাত লতায় বন্ধনপূর্ব্বক ভল্ল বা বর্ষার সৃষ্টি করিয়াছিলেন। কৃত্রিম উপায়ে অগ্ন্যুৎপাদন মানবজাতির দ্বিতীয় আবিষ্কার। নবাবিষ্কৃত অগ্নি ও ভল্লের সাহায্যে আদিম মানবগণ সেই প্রাচীনযুগের অতিকায় ভীষণ হিংস্ৰজন্তুসমূহের আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, এবং ক্রমশঃ সমগ্র জীবজগতের উপরে স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। মানবজাতির শৈশবে, অগ্ন্যুৎপাদনের উপায় আবিষ্কৃত হইলেও, আদিম মানবসমাজে বহুকালযাবৎ ধাতুর ব্যবহার অজ্ঞাত ছিল। ধাতব অস্ত্রনির্ম্মাণপদ্ধতির

  1. “Eolith means an instrument not chipped into any intentional form, but only natural forms utilised at once. Nature, Aug. 31st. 1905.”