আবিষ্কারকালপর্য্যন্ত, তীক্ষ্ণধার পাষাণখণ্ডই আদিম মানবের একমাত্র প্রহরণ ছিল। পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকগণ, ধাতবঅস্ত্রনির্ম্মাণকালপর্য্যন্ত সময়ের, প্রস্তরের যুগ (Stone Age) নাম দিয়াছেন। জগদ্বিখ্যাত পুরাতত্ত্ববিদ্ লবক্ (Sir John Lubbock, Lord Avebury) প্রস্তরের যুগকে দুইভাগে বিভক্ত করিয়াছেন; প্রস্তরযুগের প্রথম ভাগের নাম প্রত্ন-প্রস্তরের যুগ (Palæolithic Age) ও দ্বিতীয় ভাগের নাম নব্য-প্রস্তরের যুগ (Neolithic Age)। আদিম মানবের যে সমস্ত প্রহরণ অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহা সাধারণতঃ দুইভাগে বিভক্ত হইতে পারে; (ক) প্রত্ন-প্রস্তরযুগের অস্ত্র—ইহাতে মানবের শিল্পচাতুর্য্যের বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায় না। ইহা দেখিয়া এইমাত্র বুঝিতে পারা যায় যে, ইহা ভূপৃষ্ঠে অন্বেষণলব্ধ প্রস্তরখণ্ড মাত্র নহে; (খ) নব্যপ্রস্তরযুগের অস্ত্র—নব্যপ্রস্তরের যুগে বর্ষাফলক, শরফলক, কুঠারফলক, ছুরিকা প্রভৃতি নানাবিধ সুদৃশ্য ও সযত্ননির্ম্মিত অস্ত্র দেখিতে পাওয়া যায়; এই যুগের অস্ত্র দেখিলে স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, আদিম মানব সেই সময়ে শিলাখণ্ড হইতে অস্ত্রনির্ম্মাণে অভ্যস্ত হইয়াছিল।
ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশে, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, মানবজাতির পরিবর্ত্তন আরব্ধ হইয়াছে; পৃথিবীর কোন্ ভাগে, কোন্ সময়ে, যুগবিপ্লবের ফলে, নিরামিষাশী আদিম মানবকে মাংসাশী হইতে হইয়াছিল, এবং তীক্ষ্ণনখদন্তের অভাবে, মৃগয়োপযোগী অস্ত্রান্বেষণে প্রবৃত্ত হইতে হইয়াছিল, তাহা অদ্যাপি নির্ণীত হয় নাই। বর্ত্তমান সময়ে এই মাত্র বলা যাইতে পারে যে, পৃথিবীর সর্ব্বত্র একই সময়ে যুগবিপ্লব হয় নাই। ভিন্ন ভিন্ন দেশে, ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় মানব এখনও সমান অবস্থায় উন্নীত হইতে পারে নাই। অদ্যাপি জগতে এমন মনুষ্য আছে, যাহারা ধাতুর ব্যবহার জানে না। ভিন্ন ভিন্ন দেশে, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জ্ঞানের উন্নতির সহিত, মানবজাতির