সুতরাং তাঁহার সহিত ১০১৯ খৃষ্টাব্দে গৌড়েশ্বরের সহিত যুদ্ধ অসম্ভব নহে। প্রথম মহীপালের রাজ্যকালে বারাণসীতে বহু মন্দির চৈত্যাদি নির্ম্মিত হইয়াছিল। স্থিরপাল ও বসন্তপাল নামক ব্যক্তিদ্বয় গৌড়েশ্বরের আদেশে বারাণসীতে “ধর্ম্মরাজিকা” ও “সাঙ্গধর্ম্মচক্রের” জীর্ণসংস্কার এবং “অষ্টমহাস্থানশৈল-বিনির্ম্মিত-গন্ধকূটী” নূতন করিয়া নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন[১]। অনুমান হয় যে, স্থিরপাল ও বসন্তপাল রাজবংশসম্ভূত ছিলেন।
মহীপালদেব যখন গৌড়েশ্বর, তখন আর্য্যাবর্ত্তের ইতিহাসের একটি নূতন অধ্যায় আরব্ধ হইতেছিল। হূণ-প্লাবনের পঞ্চশত বর্ষ পরে আর্য্যাবর্ত্ত পুনরায় বহিঃশত্রু কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়াছিল। হূণ-যুদ্ধের পর হইতে পঞ্চশতাব্দী কাল যাবৎ আর্য্যাবর্ত্তের নরনাথগণ গৃহ-বিবাদে বলক্ষয় করিয়া আর্য্যাবর্ত্তের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করিতেছিলেন। পারস্যে আর্দাশিরবাবেকানের বংশজাত শেষ রাজা যখন নূতন ধর্ম্মাবলম্বী আরবগণের নিকটে পরাজিত হইয়া নিহত হইয়াছিলেন, তখনও আর্য্যাবর্ত্ত-রাজগণ জগতে নূতন রাষ্ট্রীয় শক্তি উন্মেষের সংবাদ অবগত হন নাই। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে মুসলমান বীরগণ যখন সিন্ধুদেশ আক্রমণ করিয়া উহা অধিকার করিয়াছিলেন, তখনও আর্য্যাবর্ত্ত-রাজগণের চৈতন্য উদয় হয় নাই। তখনও প্রাচীন পারসীক-সাম্রাজ্যের ধ্বংসের সংবাদ অবগত হইয়াও, আর্য্যাবর্ত্ত-রাজগণ গৃহ-বিবাদে ব্যাপৃত ছিলেন; তখনও গুর্জ্জরপ্রতীহার-রাজগণের ভয়ে রাষ্ট্রকূট-রাজগণ গুর্জ্জরের বিরুদ্ধে তাজিক নামে পরিচিত সিন্ধুদেশবাসী মুসলমানগণের সহিত সন্ধি-বন্ধনে আবদ্ধ হইতেন। প্রাচীন পারসীকসাম্রাজ্য ধ্বংসের পরে প্রাচীন পারসীক জাতিকে নবধর্ম্মে
- ↑ গৌড়লেখমালা, পৃঃ ১০৭-৮।