পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২৫৩

সুতরাং তাঁহার সহিত ১০১৯ খৃষ্টাব্দে গৌড়েশ্বরের সহিত যুদ্ধ অসম্ভব নহে। প্রথম মহীপালের রাজ্যকালে বারাণসীতে বহু মন্দির চৈত্যাদি নির্ম্মিত হইয়াছিল। স্থিরপাল ও বসন্তপাল নামক ব্যক্তিদ্বয় গৌড়েশ্বরের আদেশে বারাণসীতে “ধর্ম্মরাজিকা” ও “সাঙ্গধর্ম্মচক্রের” জীর্ণসংস্কার এবং “অষ্টমহাস্থানশৈল-বিনির্ম্মিত-গন্ধকূটী” নূতন করিয়া নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন[]। অনুমান হয় যে, স্থিরপাল ও বসন্তপাল রাজবংশসম্ভূত ছিলেন।

 মহীপালদেব যখন গৌড়েশ্বর, তখন আর্য্যাবর্ত্তের ইতিহাসের একটি নূতন অধ্যায় আরব্ধ হইতেছিল। হূণ-প্লাবনের পঞ্চশত বর্ষ পরে আর্য্যাবর্ত্ত পুনরায় বহিঃশত্রু কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়াছিল। হূণ-যুদ্ধের পর হইতে পঞ্চশতাব্দী কাল যাবৎ আর্য্যাবর্ত্তের নরনাথগণ গৃহ-বিবাদে বলক্ষয় করিয়া আর্য্যাবর্ত্তের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করিতেছিলেন। পারস্যে আর্দাশিরবাবেকানের বংশজাত শেষ রাজা যখন নূতন ধর্ম্মাবলম্বী আরবগণের নিকটে পরাজিত হইয়া নিহত হইয়াছিলেন, তখনও আর্য্যাবর্ত্ত-রাজগণ জগতে নূতন রাষ্ট্রীয় শক্তি উন্মেষের সংবাদ অবগত হন নাই। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে মুসলমান বীরগণ যখন সিন্ধুদেশ আক্রমণ করিয়া উহা অধিকার করিয়াছিলেন, তখনও আর্য্যাবর্ত্ত-রাজগণের চৈতন্য উদয় হয় নাই। তখনও প্রাচীন পারসীক-সাম্রাজ্যের ধ্বংসের সংবাদ অবগত হইয়াও, আর্য্যাবর্ত্ত-রাজগণ গৃহ-বিবাদে ব্যাপৃত ছিলেন; তখনও গুর্জ্জরপ্রতীহার-রাজগণের ভয়ে রাষ্ট্রকূট-রাজগণ গুর্জ্জরের বিরুদ্ধে তাজিক নামে পরিচিত সিন্ধুদেশবাসী মুসলমানগণের সহিত সন্ধি-বন্ধনে আবদ্ধ হইতেন। প্রাচীন পারসীকসাম্রাজ্য ধ্বংসের পরে প্রাচীন পারসীক জাতিকে নবধর্ম্মে

  1. গৌড়লেখমালা, পৃঃ ১০৭-৮।