বৈদেশিক শত্রুর আক্রমণ হইতে উত্তরাপথ রক্ষা করিতে যাওয়া কখনই তিনি উপযুক্ত মনে করেন নাই[১]।” চন্দজ মহাশয় বৈরাগ্যের যুক্তি দেখাইয়া মহীপালের কাপুরুষতা ও সঙ্কীর্ণচিত্ততা গোপন করিবার চেষ্টা করিয়াছেন। বস্তুতঃ মহীপালের ঔদাসীন্যের কোনই উপযুক্ত কারণ দেখিতে পাওয়া যায় না, ধর্ম্মবিদ্বেষ ও ঈর্ষাই যে মহীপালের ধর্ম্ম-যুদ্ধের প্রতি ঔদাসীন্যের প্রধান কারণ, সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নাই।
প্রাচীন ষাহি-রাজ্য ধ্বংস করিয়া সুলতান মহ্মূদ্ যখন উত্তরাপথের প্রসিদ্ধ নগরসমূহ ধ্বংস করিতেছিলেন, শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ অনুমান করেন যে, গৌড়েশ্বর তখন “বারাণসীধামকে কীর্ত্তিরত্নে সজ্জিত করিতে গিয়া...তন্ময় হইয়া পড়িয়াছিলেন[২]।” স্থাণ্বীশ্বর, মথুরা, কান্যকুব্জ, গোপাদ্রি, কলঞ্জর, সোমনাথ প্রভৃতি নগর, দুর্গ ও পবিত্র তীর্থসমূহ যখন ধ্বংস হইতেছিল, তখন উত্তরাপথের পূর্ব্বার্দ্ধের অধীশ্বর পরম নিশ্চিন্তমনে “কর্ম্মানুষ্ঠান” করিতেছিলেন। দুর্জ্জেয় গোপাদ্রিদুর্গ অধিকৃত হইল; প্রাচীন কান্যকুব্জ নগরে বৎসরাজ, নাগভট ও ভোজদেবের বংশধর রাজ্যপালদেব আত্মরক্ষায় অসমর্থ হইয়া মহ্মূদের শরণাগত হইলেন। মহ্মূদ তাহাকে আশ্রয় দিয়া রাজ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিলে চন্দেল্ল-রাজ গণ্ডের পুত্র বিদ্যাধরের আদেশে কচ্ছপঘাতবংশীয় অর্জ্জুন রাজ্যপালের মস্তকচ্ছেদন করিয়াছিলেন[৩]। তখনও কি গৌড়েশ্বর বৈরাগ্য অবলম্বন করিয়াছিলেন?