আদিম মানবগণ প্রত্ন-প্রস্তরযুগে এই সকল প্রাচীন অস্ত্র দক্ষিণাপথ হইতে উত্তরাপথের পূর্ব্বখণ্ডে আনয়ন করিয়াছিলেন[১]।
লক্ষ লক্ষ বৎসর ধরিয়া পাষাণখণ্ড হইতে অস্ত্র নির্ম্মাণ করিয়া আদিম মানব, যে যুগে এই জাতীয় অস্ত্রনির্ম্মাণে পারদর্শী হইয়া উঠিল, সেই যুগের নাম নব্য-প্রস্তরযুগ। এই যুগে দূর হইতে অস্ত্র বর্ষণ করিবার উপায় আবিস্কার করিয়া মানবজাতি জীবগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছিলেন। ধনুর সাহায্যে গুটিকা বা শর নিক্ষেপের কৌশল আবিষ্কার করিয়া, আদিম মানবগণ অযথা বলক্ষয় বা শোণিতস্রাব না করিয়াও শত্রু নিপাত করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। নূতন শক্তিলাভ করিয়া তাঁহারা প্রাচীন জগতের অতিকায় দুর্জ্জেয়, হিংস্র জীবসমূহের ধ্বংসসাধন করিয়া পৃথিবী মানবের বাসোপযোগী করিয়াছিলেন; বস্তুতঃ এই যুগ হইতেই মানবের সভ্যতা আরব্ধ হইয়াছে। নব্য-প্রস্তরযুগের আয়ুধসমূহ, প্রত্ন-প্রস্তরযুগের তুলনায় সংখ্যায় অধিক, কলানৈপুণ্যের পরিচায়ক এবং আকারে ও প্রকারে বহুবিধ। বঙ্গদেশের যে প্রদেশে প্রত্ন-প্রস্তরযুগের অস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে, সেই প্রদেশেই নব্য-প্রস্তরযুগের অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গিয়াছে। সর্ব্বপ্রথমে সিংহভূম জেলায় চাইবাসা নগরে নব্য-প্রস্তরযুগের অস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছিল। ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে কাপ্তেন বীচিং (Captain Beeching) সিংহভূম জেলায় চাইবাসা নগরে ও চক্রধরপুরের আট ক্রোশ দুরবর্ত্তী একটি নদীতীরে প্রস্তরনির্ম্মিত ছুরিকা আবিষ্কার করিয়াছিলেন[২]। ভিন্সেণ্ট্ বল্ এই সমস্ত স্থান পরীক্ষা করিয়া স্থির করেন যে, আবিষ্কৃত পাষাণখণ্ডগুলি মানব কর্ত্তৃক নির্ম্মিত ও ব্যবহৃত অস্ত্র[৩]।