পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২৬৯

তত্রাদিশূরঃ শূরবংশসিংহো বিজিত্য বৌদ্ধং নৃপপালবংশং।
শশাস গৌড়” ইত্যাদি।

 ‘গৌড়ে ব্রাহ্মণ’ধৃত এই শেষোক্ত বচন আবার শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু কর্ত্তৃক ‘বারেন্দ্রকুলপঞ্জিকা’ধৃত “শাকে বেদকলম্বষট্‌কবিনিতে রাজাদিশূর স চ” (বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, প্রথম ভাগ, ৮৩ পৃঃ) এই বচনের, অর্থাৎ—আদিশূর ৬৫৪ শকাব্দে বর্ত্তমান ছিলেন, এই মতের বিরোধী। যে যে কুলজ্ঞগণের সহিত আলাপ করিয়াছি, তাঁহারা এ সকল বচনের কোনটির বিষয়েই অবগত নহেন। সুতরাং এই সকল বচন প্রবল জনশ্রুতিমূলক বলিয়া স্বীকার করা যায় না......‘লঘুভারত’কারও আদিশূর কর্ত্তৃক গৌড়ের পাল-বংশ উচ্ছেদের উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন (গৌড়ে ব্রাহ্মণ, ৩২ পৃঃ, ৪ নং টীকা)।”—গৌড়রাজমালা, পৃঃ ৫৭-৫৮।

 শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ-সংগৃহীত আদিশূর সম্বন্ধীয় কুলশাস্ত্রের প্রমাণ পর্য্যালোচনা করিলে স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, ১৩১৯ বঙ্গাব্দের পূর্ব্বে আবিষ্কৃত কুলশাস্ত্রসমূহে আদিশূরের আবির্ভাবকাল সম্বন্ধে দুইটি ভিন্ন মত ছিল। প্রথম মতানুসারে আদিশূর পাল-রাজবংশের পূর্ব্ববর্ত্তী, তিনি ৬৫৪ শকে আবির্ভূত হইয়াছিলেন এবং আদিশূর প্রথম গোপালদেবের সমসাময়িক ব্যক্তি। দ্বিতীয় মতানুসারে আদিশূর পাল-রাজগণকে পরাজিত করিয়া গৌড়ের অধিকার লাভ করিয়াছিলেন; ‘ভাদুড়ীকুলের বংশাবলীতে ও ‘লঘুভারতে’ এই মত দেখিতে পাওয়া যায়।

 জয়ন্ত ও আদিশূরের একত্ব সম্বন্ধে যে সমস্ত প্রমাণ আবিষ্কৃত হইয়াছে, তৎসমুদয় পূর্ব্বে (১৩২-৩৩ পৃঃ) আলোচিত হইয়াছে। ১২৩১ বঙ্গাদে প্রকাশিত ‘বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস,’ রাজন্যকাণ্ডে শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু কতকগুলি নূতন মত প্রকাশ করিয়াছেন:—

 (১) “রাঢ়ীয় কুলমঞ্জরীতে বর্ণিত হইয়াছে, ৬৫৪ শকে, অর্থাৎ ৭৩২ খৃষ্টাব্দে আদিশূর রাজা হন এবং ৬৬৮ শকে বা ৭৪৬ খৃষ্টাব্দে সাগ্নিক বিপ্রগণ গৌড়ে আগমন করেন।” পৃঃ ৯২

 (২) “সুপ্রসিদ্ধ রাঢ়ীয় কুলাচার্য্য বাচস্পতিমিশ্রের মতে ৬৫৪ শকেই (৭৩২ খৃষ্টাব্দে) বিপ্রগণ গৌড়ে সমাগত হন।”

 (৩) “বারেন্দ্র কুলপঞ্জীর মতে......৬৫৪ শকে......কান্যকুব্জোদ্ভব সমুজ্জ্বলকান্তিবিশিষ্ট পঞ্চগোত্রের পঞ্চজন বেদবিদ্ ব্রাহ্মণকে আনিবার জন্য যত্নবান্ হইয়াছিলেন।” পৃঃ ৯৩