পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পরিচ্ছেদ।
২৯৩

করিয়াছিলেন এবং উৎকল-রাজ্য নাগবংশীয় রাজগণকে প্রত্যর্পণ করিয়াছিলেন[]। রামপালের জনৈক সামন্ত কামরূপ বিজয় করিয়াছিলেন[]। কামরূপ রাজগণ বোধ হয়, এই সময়ে ক্রমশঃ দুর্ব্বল হইয়া পড়িতেছিলেন, কারণ, গৌড়েশ্বরগণ বারম্বার কামরূপ-রাজ্য জয় করিয়াছিলেন। রামপালের এবং কুমারপালের রাজত্বকালে কামরূপরাজ্য অধিকৃত হইয়াছিল এতদ্ব্যতীত সেনবংশীয় বিজয়সেন ও লক্ষ্মণসেন এক একবার কামরূপ অধিকার করিয়াছিলেন।

  1. ভবভূষণসন্ততিভুবমনুজগ্রাহজিতমুৎকলত্রং যঃ।
    জগদবতিস্ম সমস্তং কলিঙ্গতস্তান্ নিশাচরান্ নিঘ্নন্॥
    —রামচরিত, ৩।৪৫।

     শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ বলিয়াছেন যে, এই শ্লোকে ‘ভবভূষণ’ অর্থে চন্দ্র বুঝায় এবং ‘ভবভূষণসন্ততি’ অর্থে সোমবংশীয় রাজা বুঝায়।” ‘রামচরিতে’র ভূমিকায় শাস্ত্রী মহাশয় লিখিয়াছেন,—"He (Rampala) conquered Utkala and restored it to the Nagavamsis.” ইহা দ্বারা বুঝা যায়, শাস্ত্রী মহাশয় ‘ভবভূষণসন্ততি’ পদ ‘নাগবংশীয়’ অর্থে গ্রহণ করিয়াছেন। নাগ ভবের (শিবের) ভূষণ হইলেও নাগবংশীয় কোন রাজা উড়িষ্যায় কখনও রাজত্ব করিয়াছেন বলিয়া এ পর্য্যন্ত জানা যায় নাই। উড়িষ্যার পার্ব্বত্যপ্রদেশে নাগবংশীয় রাজগণের বিস্তৃত অধিকার ছিল। সুহৃদ্‌বর রায় বাহাদুর শ্রীযুক্ত হীরালাল ‘গৌড়রাজমালা’ প্রকাশিত হইবার পূর্ব্বে অন্ততঃ পাঁচখানি খোদিতলিপি ও একখানি তাম্রশাসনের বিবরণ প্রকাশ করিয়াছিলেন। (Epigraphia Indica, Vol. IX, pp. 161-164, 176 etc.) পক্ষান্তরে ‘রামচরিতে’র (২।৫) টীকা হইতে জানা যায়, রামপালের রাজ্য লাভের অব্যবহিত পূর্ব্বে উৎকলে ‘কেশরী’-উপাধিধারী একজন নৃপতি ছিলেন। ভীমের সহিত যুদ্ধোদ্যত রামপালের সহিত যাঁহারা যোগদান করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে ‘উৎকলেশ-কর্ণকেশরীর’ পরাভবকারী দণ্ডভুক্তি-ভূপতি জয়সিংহের নাম দৃষ্ট হয়।” খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর শেষপাদে একই প্রদেশে গঙ্গাবংশীয় অনন্তবর্ম্মা চোড়গঙ্গ ও কেশরিবংশীয় কর্ণকেশরীর অধিকার ছিল, তখন সেই প্রদেশে নাগবংশীয় রাজগণের অধিকার কেন থাকিতে পারে না, তাহা বুঝিতে পারা যায় না। সে সময়ে উড়িষ্যায় সোমবংশীয় নরপতিগণের অধিকার ছিল কিনা, তাহা অদ্যাবধি নির্ণীত হয় নাই।

  2. তস্যজিতকামরূপাদিবিষয়বিনিবৃত্তঃ মানসম্পাদ্যঃ।
    মহিমানমায়ননৃপো যতমানস্য প্রজাভিরক্ষার্থম্॥
    —রামচরিত, ৩।৪৭।