করিয়াছিলেন; কারণ নবদ্বীপে যে সেন-বংশের রাজধানী ছিল, ইহার কোনও প্রমাণই অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয় নাই। দ্বিতীয় কথা, আগমনের পথ; কান্যকুব্জের নিকট হইতে মগধ লুণ্ঠন যত সহজ, মগধ হইতে সামান্য সেনা লইয়া গৌড় বা রাঢ় লুণ্ঠন তত সহজ নহে। মহম্মদ্-ই-বখ্তিয়ার কোন্ পথে নোদিয়া আক্রমণ করিতে আসিয়াছিলেন, তাহা জানিতে পারা যায় নাই। তিনি যদি রাজমহলের নিকট দিয়া গঙ্গার দক্ষিণকূল অবলম্বন করিয়া আসিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি কখনই অল্প সেনা লইয়া আসিতে পারেন নাই এবং রাজধানী গৌড় বা লক্ষ্মণাবতী অধিকার না করিয়া আসেন নাই। তখন ঝাড়খণ্ডের বনময় পর্ব্বতসঙ্কুল পথ সামান্য সেনার পক্ষে অগম্য ছিল। এই সকল কারণে অষ্টাদশ অশ্বারোহী লইয়া মহম্মদ্-ই-বখ্তিয়ারের গৌড়-বিজয়কাহিনী বিশ্বাসযোগ্য বলিয়া বোধ হয় না। গৌড়-জয়ের প্রকৃত ঘটনা এখনও অন্ধকারাচ্ছন্ন আছে। তাহা নূতন আবিষ্কারের আলোকে উদ্ভাসিত হইয়া না উঠিলে আমরা তাহা বুঝিতে পারিব না। তৃতীয় কথা, লক্ষ্মণসেন তখন জীবিত ছিলেন না। লক্ষ্মণসেনের পুত্রত্রয়ের মধ্যে তখন কে গৌড়-রাজ্যের আধকারী ছিলেন, তাহা অদ্যাপি নির্ণীত হয় নাই। সিংহাসন লইয়া ভ্রাতৃগণের মধ্যে বিরোধ উপস্থিত হইয়াছিল কি না, তাহাও অদ্যাপি স্থির হয় নাই। এই মাত্র বলা যাইতে পারে যে, মহম্মদ্-ই-বখ্তিয়ারের নদীয়া-বিজয়-কাহিনী সম্ভবতঃ অলীক। ইহা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে স্বীকার করিতে হইবে যে, নোদিয়া পুনর্ব্বার হিন্দু-রাজগণ কর্ত্তৃক অধিকৃত হইয়াছিল; কারণ, মহম্মদ-ই-বখতিয়ারের অর্দ্ধশতাব্দী পরে বাঙ্গালার স্বাধীন সুলতান মুগীস্উদ্দীন য়ুজবক্ নোদিয়া-বিজয় করিয়া বিজয়কাহিনী স্মরণার্থ নূতন মুদ্রা মুদ্রাঙ্কন করাইয়াছিলেন[১]।
- ↑ Catalogue of Coins in the Indian Museum, Calcutta, Vol. II, pt. II, p. 146, no. 6.