পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।
২৩

জাতির প্রাচীন বাসস্থান এবং তাঁহারা আর্য্যাবর্ত্ত হইতে পশ্চিমে প্রয়াণকালে বালুচিস্তানে যে উপনিবেশ স্থাপন করিয়াছিলেন, আধুনিক ব্রহুই জাতি সেই ঔপনিবেশিকগণের বংশধর। দ্রবিড়জাতির সহিত প্রাচীন বাবিরুষবাসী সুমেরীয় জাতির যে নিকট সম্পর্ক ছিল সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নাই; তবে ইহাও সম্ভব যে দ্রবিড়গণ বাবিরুষ অধিকার করিয়া, পরে ভারতবর্ষ অধিকার করিয়াছিলেন এবং প্রাচীন আর্য্যগণের ন্যায় মধ্য-এসিয়া অথবা উত্তর-এসিয়া তাঁহাদিগের প্রাচীন বাসস্থান ছিল।

 আর্য্যোপনিবেশের পূর্ব্বে যে প্রাচীন জাতি ভূমধ্যসাগর হইতে বঙ্গোপসাগর পর্য্যন্ত স্বীয় অধিকার বিস্তার করিয়াছিল, তাহারাই বোধ হয় ঋগ্বেদের দস্যু এবং তাহারাই ঐতরেয় আরণ্যকে বিজেতৃগণ কর্ত্তৃক পক্ষী নামে অভিহিত হইয়াছে। এই প্রাচীন দ্রবিড়জাতিই বঙ্গ মগধের আদিম অধিবাসী। নৃতত্ত্ববিদ্‌ পণ্ডিতগণ আধুনিক বঙ্গবাসিগণের নাসিকা ও মস্তক পরীক্ষা করিয়া সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, তাঁহারা দ্রবিড় ও মোঙ্গোলীয় জাতির সংমিশ্রণে উৎপন্ন। মগধে ব্রাহ্মণাদি উচ্চ জাতীয় ব্যক্তিগণকে আর্য্য জাতীয় অথবা আর্য্যসংমিশ্রণে উৎপন্ন বলিয়া বোধ হয়; কিন্তু বঙ্গবাসিগণকে জাতিনির্ব্বিশেষে দ্রবিড় ও মোঙ্গোলীয় জাতির সংমিশ্রণের ফল বলা যাইতে পারে।

 উত্তরাপথের পশ্চিমাংশ আর্য্যগণ কর্ত্তৃক বিজিত হইবার বহুকাল পরেও মগধ ও বঙ্গ স্বাধীন ছিল। যে সময়ে শতপথ ব্রাহ্মণ রচিত হইয়া ছিল, সে সময়ে মিথিলায় আর্য্যোপনিবেশ স্থাপিত হইলেও, মগধ ও বঙ্গ আর্য্যজাতির নিকট মস্তক অবনত করে নাই। তখনও পর্য্যন্ত এই দেশদ্বয় আর্য্যাবর্ত্তের সীমাভুক্ত ছিল না। প্রবাদ শুনিতে পাওয়া যায় যে, অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সৌরাষ্ট্র ও মগধ দেশে তীর্থযাত্রা বিনা অন্য কারণে গমন করিলে পাতিত্যদোষ জন্মিত ও পুনঃ সংস্কার আবশ্যক