হইত[১]। বৌধায়ন ধর্ম্মসূত্রে দেখিতে পাওয়া যায় যে, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সৌবীর প্রভৃতি দেশে গমন করিলে শুদ্ধিলাভার্থ যজ্ঞবিশেষের অনুষ্ঠান করিতে হইত[২]। পূর্ব্বোক্ত নিষেধবাক্য দেখিয়া বোধ হয় যে, বৌধায়ন স্মৃতির রচনাকালেও বঙ্গ-মগধের প্রাচীন অধিবাসিগণ পিতৃপুরুষের পূজার্চ্চনারীতির ও প্রাচীন দেবসমূহের গৌরব অক্ষুণ্ণ রাখিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। এই জন্যই গর্ব্বিত আর্য্যগণ উক্ত দেশসমূহে গমন সম্বন্ধে নিষেধবাক্য প্রচার করিয়াছিলেন।
প্রাচীন সাহিত্যে আর্য্যগণকর্ত্তৃক মগধ ও বঙ্গ অধিকারের কোন উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায় না। সুতরাং কোন সময়ে আর্য্যজাতি বঙ্গ ও মগধ অধিকার করিয়াছিলেন, তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। সিংহলের ইতিহাস হইতে জানিতে পারা যায় যে, খৃষ্টপূর্ব্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে বিজয়সিংহ নামক বঙ্গদেশীয় কোন রাজপুত্র সিংহলে উপনিবেশ স্থাপন করিয়াছিলেন। এই ঘটনার মূলে সত্য আছে কি না তাহা বলিতে পারা যায় না, তবে ইহা যদি প্রকৃত হয়, তাহা হইলে স্বীকার করিতে হইবে যে, খৃষ্টপূর্ব্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর পূর্ব্বে মগধে ও বঙ্গে আর্য্যসভ্যতা প্রচারিত হইয়াছিল। বিজয়সিংহ নাম অনার্য্য নাম নহে সুতরাং তাঁহার জন্মের পূর্ব্বেই বঙ্গ মগধের প্রাচীন অধিবাসিগণ পুরাতন ভাষা ও রীতি নীতি পরিত্যাগ করিয়া আর্য্যজাতীয় আচার ব্যবহার ও ধর্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন।
- ↑
অঙ্গবঙ্গকলিঙ্গেষু সৌরাষ্ট্রমগধেষু চ।
তীর্থযাত্রাং বিনা গচ্ছন্ পুনঃ সংস্কারমর্হতি।বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস ১ম ভাগ, ১ম খণ্ডে প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয় ইহা মনুর বাক্য বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন (বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, ১ম ভাগ, ১ম অংশ পৃঃ ৫০, পাদটীকা ১)। সম্প্রতি অধ্যাপক শ্রীযুক্ত সতীশচন্দ্র মিত্র প্রমাণ করিয়াছেন যে, ইহা মানব ধর্ম্মশাস্ত্রের শ্লোক নহে—যশোহর খুলনার ইতিহাস, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৪৯।
- ↑ বৌধায়ন ধর্ম্মসূত্র। ১।১।২।