পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৪৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।



পরিশিষ্ট (ক্)

 এসিয়াটিক সোসাইটির ভূতপূর্ব্ব সভাপতি মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচিত “Bengal, Bengalees. Their manners, customs and literature” নামক অপ্রকাশিত প্রবন্ধ অবলম্বনে এই পরিচ্ছেদ লিখিত হইয়াছে। শাস্ত্রী মহাশয় বঙ্গীয় সাহিত্যসম্মিলনের সপ্তম অধিবেশনে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতির অভিভাষণে বলিয়াছেন, “আমার বিশ্বাস বাঙ্গালী একটি আত্মবিস্মৃত জাতি।…………। বাঙ্গালার ইতিহাস এখনও তত পরিষ্কার হয় নাই যে, কেহ নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারেন বাঙ্গালা Egypt হইতে প্রাচীন অথবা নূতন। বাঙ্গালা Nineva ও Babylon হইতেও প্রাচীন অথবা নূতন। বাঙ্গালা চীন হইতেও প্রাচীন অথবা নূতন। ………যখন আর্য্যগণ মধ্য এসিয়া হইতে পাঞ্জাবে আসিয়া উপনীত হন, তখনও বাঙ্গালা সভ্য ছিল। আর্য্যগণ আপনাদের বসতি বিস্তার করিয়া যখন এলাহাবাদ পর্য্যন্ত উপস্থিত হন, তখন বাঙ্গালার সভ্যতায় ঈর্ষ্যাপরবশ হইয়া তাঁহারা বাঙ্গালীকে ধর্ম্মজ্ঞানশূন্য এবং ভাষাশূন্য পক্ষী বলিয়া বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন।……

 বুদ্ধদেবের জন্মের পূর্ব্বে বাঙ্গালীরা জলে ও স্থলে এত প্রবল হইয়াছিল যে, বঙ্গরাজ্যের একটি ত্যজ্যপুত্র সাত শত লোক লইয়া নৌকাযোগে লঙ্কাদ্বীপ দখল করিয়াছিলেন। তাঁহারই নাম হইতে লঙ্কাদ্বীপের নাম হইয়াছে সিংহলদ্বীপ। রামায়ণে লঙ্কাদ্বীপের নাম সিংহল দ্বীপ কোথাও নাই, কিন্তু ইহার পরে উহার লঙ্কা নাম উঠিয়া গিয়া ক্রমে সিংহল নাম সংস্কৃত সাহিত্যে ফুটিয়া উঠিয়াছে। প্রাচীন গ্রন্থে দেখিতে পাওয়া যায় যে, বড় বড় খাঁটি আর্য্যরাজগণ, এমন কি যাঁহারা ভারতবংশীয় বলিয়া আপনাদের গৌরব করিতেন, তাঁহারাও বিবাহসূত্রে বঙ্গেশ্বরের সহিত মিলিত হইবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করিতেন।………। যখন লোকে লোহার ব্যবহার করিতে জানিত না, তখন বেতে বাঁধা নৌকায় চড়িয়া বাঙ্গালীরা নানা দেশে ধান চাউল বিক্রয় করিতে যাইত, সে নৌকার নাম ছিল ‘বালাম নৌকা’। তাই সে নৌকায় যে চাউল আসিত তাহার নাম বালাম চাউল হইয়াছে; বালাম বলিয়া কোন ভাষায়