পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
বাঙ্গালার ইতিহাস।

পূর্ব্বে লৌহিত্যের অপরপারে গিরিসঙ্কুল আটবিক প্রদেশের অধিবাসিগণকে, রাজাধিরাজ মহারাজ স্বতন্ত্র স্বাধীনরাজ্যবাসী বলিয়া স্বীকার করিতে বোধ হয় কুণ্ঠিত হইতেন। ধর্ম্মপ্রচারের উত্তেজনায় যখন বিস্তৃত মৌর্য্যসাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয়বন্ধন শিথিল হইয়া পড়িল, তখন হইতে সুদূর প্রত্যন্তস্থিত প্রদেশগুলি স্বাধীন হইবার সুযোগের প্রতীক্ষা করিতে ছিল। দেবতাদিগের প্রিয় প্রিয়দর্শী অশোকের দেহাবসানের অব্যবহিত পরে পশ্চিমে গান্ধার ও কপিশা, এবং দক্ষিণে অন্ধ্র ও কলিঙ্গদেশ স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করিয়াছিল। মৌর্য্যরাজবংশের অধিকারকালে ভারতবর্ষে রাজনামাঙ্কিত সুবর্ণ বা রজতমুদ্রার প্রচলন ছিল না; তৎকালে পুরাণ নামক চতুষ্কোণ রজতখণ্ডই মুদ্রারূপে ব্যবহৃত হইত। শ্রেষ্ঠী ও স্বার্থবাহগণ এই জাতীয় মুদ্রা প্রস্তুত করিত। মগধ ও বঙ্গের নানাস্থানে শত শত “পুরাণ” নামক প্রাচীন রজতমুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছে। ১৮৭৯ খৃষ্টাব্দে, জিলা ২৪ পরগণার অন্তর্গত জাক্রা গ্রামে এই জাতীয় ছয়টি মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছিল[১]। বাঙ্গালা ১২৭৫ সালে দীনবন্ধু মিত্র নামক কোন ব্যক্তি মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত তমলুকনগরে একটি “পুরাণ” আবিষ্কার করিয়াছিলেন[২]। মগধ ও তীরভুক্তির নানাস্থানে “পুরাণ” আবিষ্কৃত হইয়াছে। গত বৎসর পূর্ণিয়াজেলার একস্থানে প্রায় তিন সহস্র “পুরাণ” আবিষ্কৃত হইয়াছিল[৩]

 ভারতবর্ষে যে সময়ে “পুরাণ” ব্যবহৃত হইত, সেই সময়ে দুইজাতীয় তাম্রমুদ্রার ব্যবহার ছিল। প্রথম, বৃহৎ তাম্রখণ্ড হইতে কর্ত্তিত ক্ষুদ্র

  1. Proceedings, Asiatic Society of Bengal, 1879. P. 245.
  2. Ibid, 1882, p. 112.
  3. Annual Report of the Indian Museum, Archaeological Section. 1913-14.