সামন্তরাজ বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষ ও বজ্রাসনের উপরে মহারাজ অশোক প্রিয়দর্শী যে মন্দির নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহার চতুষ্পার্শ্বে একটি পাষাণ নির্ম্মিত বেষ্টনী নির্ম্মাণ করাইয়া দিয়াছিলেন। বুদ্ধগয়ার বর্ত্তমান মন্দিরের চতুষ্পার্শ্বে যে পাষাণবেষ্টনীর ধ্বংসাবশেষ অদ্যাবধি বিদ্যমান আছে, তাহা খৃষ্টপূর্ব্ব দ্বিতীয় বা প্রথম শতাব্দীতে ব্রহ্মমিত্র ও তাঁহার পত্নী নাগদেবার আদেশে নির্ম্মিত হইয়াছিল[১]। শুঙ্গ বা কাণ্ববংশীয় রাজগণের কোন প্রাচীন খোদিতলিপি অদ্যাবধি মগধে, রাঢ়ে, গৌড়ে বা বঙ্গে আবিষ্কৃত হয় নাই। শুঙ্গবংশীয়গণের একখানি মাত্র খোদিতলিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে[২], কিন্তু কাণ্ববংশীয়গণের কোন খোদিতলিপি ভারতের কোন স্থানে আবিষ্কৃত হয় নাই সুতরাং গৌড়, রাঢ় বা বঙ্গ তাঁহাদিগের রাজ্যভুক্ত ছিল কি না তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য।
শকগণ ধীরে ধীরে মধ্যএসিয়া হইতে অগ্রসর হইয়া, কপিশা, গান্ধার
- ↑ মহাবোধি মন্দিরের চতুষ্পার্শ্বে যে পাষাণ নির্ম্মিত বেষ্টনীর ধ্বংসাবশেষ দেখিতে পাওয়া যায়, তাহার কাল-নির্ণয় সম্বন্ধে পণ্ডিতগণের মধ্যে মতভেদ আছে। পূর্ব্বে কনিংহাম্ এই বেষ্টনীর স্তম্ভ ও সূচীর খোদিতলিপি দেখিয়া ইহা অশোক-নির্ম্মিত স্থির করিয়াছিলেন। বেষ্টনীর বহু স্তম্ভ ও সূচী বুদ্ধগয়ার মহান্তগণের গৃহ নির্ম্মাণকালে ব্যবহৃত হইয়াছিল। ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে মহান্ত কৃষ্ণদয়ালগিরি গবর্ণমেণ্টের অনুরোধ অনুসারে সমস্ত স্তম্ভগুলি যথাস্থানে পুনঃ স্থাপন করিয়াছিলেন। এই স্তম্ভগুলির একটিতে রাজা ব্রহ্মমিত্র ও তাঁহার পত্নী নাগদেবার নাম আছে। এই প্রমাণের বলে মৃত ডাঃ ব্লক্ (Dr. Th. Bloch) স্থির করেন ষে, পাষাণবেষ্টনী অশোক-নির্ম্মিত নহে, ইহা শুঙ্গ বা কাণ্ব বংশীয় রাজগণের রাজত্বকালে নির্ম্মিত হইয়াছিল। মহাবোধিমন্দিরের পাষাণবেষ্টনীর দুই একটি সূচীতে খৃষ্টপূর্ব্ব দ্বিতীয় বা প্রথম শতাব্দীর অক্ষরও দেখা গিয়াছে।
- ↑ মধ্যপ্রদেশে বরহুত গ্রামে যে প্রাচীন স্তূপের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হইয়াছে; তাহার তোরণের একটি স্তম্ভের খোদিতলিপিতে শুঙ্গবংশের উল্লেখ আছে। Luders's List of Brahmi Inscriptions, Epigraphia Indica, Vol. X, p. 65 no. 687.