সংস্কৃত ব্যাকরণসিদ্ধ হইলেও অনাবশ্যক এবং হাস্যোদ্দীপক মনে হয়, যথা—কাদাচিৎক > কাদাচিৎকী, কিম্পাক > কিম্পাকা, কুতস্ত্য > কুতস্ত্যা, কুত্রত্য > কুত্রত্যা, দাশ্বান্ > দাশুষী, নিষেদিবান্ > নিষেদুষী ইত্যাদি। বহু সাধারণ বাঙ্গালা শব্দ সম্বন্ধে, স্বল্পার্থে, ক্ষুদ্রার্থে বা তনিমার্থে ইহা সমর্থনযোগ্য বলিয়াও মনে হয় না, যথা—কন্দযুক্ত বা ওল অর্থে কন্দী > কন্দিনী, কপাট (দরজার পাল্লা) > কপাটী, পরিখা, গর্ত্ত বা খনিত অর্থে খাত > খাতা, খঞ্জ অর্থে খোল > খোলা, গাধ (বাঙ্গালায় ব্যবহার নাই, তার বিপরীত ‘অগাধ’ শব্দই চলে) > গাধা ইত্যাদি। মহতী সভা, প্রলয়ঙ্করী বুদ্ধি, সংস্কৃতের অনুকরণে যেমন চলে, তদ্রূপ বিশাল, বিরাট, বিপুল, মস্ত, প্রকাণ্ড, বৃহৎ, বড়, অতি-বড়, বেশ-বড়, খুব বড়-রকম, বেজায় বড়, বৃহতী, মহা, বহুজনাকীর্ণ ইত্যাদি পুং-স্ত্রী-ক্লীব বা ত্রিলিঙ্গবাচক শব্দ ‘সভার’ বিশেষণে প্রয়োগ নির্ভুলভাবেই চলিতে পারে। বাঙ্গালা ভাষার গঠন-মূলে সংস্কৃতের প্রভাব সর্ব্বাপেক্ষা অধিক হইলেও পণ্ডিতী বাঙ্গালা য়ুরোপীয়-জ্ঞান-বিজ্ঞানে-উচ্চশিক্ষিত, বৈদেশিক-ভাষাসমূহে-সুপণ্ডিত, বিশ্বনাগরিকতাসুলভ এবং দেশ-কাল-জাতিগত-সংস্কারবর্জ্জিত বা তাহার অতীত মহাকবি, সাহিত্যগুরু ও ভাষাবৈজ্ঞানিকগণের হাতে পড়িয়া পরিবর্ত্তনের পর পরিবর্ত্তনাধীন, বহুমার্জ্জিত ও কালোপযোগীভাবে গঠিত হইয়া অচিন্ত্যপূর্ব্ব ভবিষ্যতের সম্মুখীন হইতেছে। বর্ত্তমানে নারীর বিশেষণে রসিকা না লিখিয়া রসিক মেয়ে লিখিতে দেখিলে যেমন ‘বঙ্গীয়’-লেখক-লেখিকা বা পাঠক-পাঠিকার চক্ষুর পীড়াদায়ক বড় আর হয় না, তদ্রূপ বৈষ্ণব কবি ও ললিত পদকর্ত্তাদের রুচির আদর্শে “শ্যামরসরসিকিনী”র পুনরাবির্ভাব হইবে, তাহারও বড় আশা করা যায় না। অর্থগত না হইয়া শব্দগত লিঙ্গানুশাসন স্ত্রীলিঙ্গবাচক ও ক্রিয়ান্বয়ী বিশেষণ-প্রয়োগ-পদ্ধতি যে-কোন-ভাষাকে জটিল করিয়া তুলে। তাহা মৃত ভাষার অলঙ্কারস্বরূপ অপরিহার্য্যভাবে বিরাজ করিতে পারে, কিন্তু বাঙ্গালার ন্যায় জীবন্ত ভাষায় উক্ত অনুশাসনের একান্ত প্রয়োজন আছে বলিয়া স্বীকৃত না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ, ইহার অভাব বা শিথিলতা, শব্দ ও ধাতুর দ্বিবচনের অভাব, এবং শব্দের বচন-ভেদে অন্বয়ী-ক্রিয়ার রূপান্তরাভাব ভাষাকে অজটিল, বৈদেশিক শিক্ষার্থীদের অনায়াস-শিক্ষাসাধ্য বা অধিগম্য করে বলিয়া মনে হয়। জীবিতভাষা স্থায়ী শৃঙ্খলরূপ নিয়ম-সূত্রাদির বাঁধ মানে না। অধুনা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাঙ্গালা অভিধান হইতে শব্দগত লিঙ্গ ও শব্দের স্ত্রীলিঙ্গরূপ প্রকটনের প্রথাও বর্জ্জিত হইতেছে। বর্ত্তমান অভিধানে নিরর্থক ও হাস্যোদ্দীপক স্ত্রীলিঙ্গরূপ প্রকটনদ্বারা অভিধানের কলেবর বৃথা স্ফীত বা ভারাক্রান্ত না করিয়া উচ্চসাহিত্যে ব্যক্তিগত আলঙ্কারিক রচনারীতি অনুসারে এবং জড় ও অপ্রাণীবাচকশব্দে ব্যক্তিত্ব আরোপ(Personification)-স্থলে, প্রচলিত ও প্রযোজ্য স্ত্রীলিঙ্গরূপ মাত্র প্রদর্শিত হইয়াছে।
প্রাচীন, মধ্য ও বর্ত্তমানযুগের বঙ্গভাষা ও সাহিত্যালোচনা, বিস্তৃতপাঠ, সঙ্ঘবদ্ধভাবে সুদীর্ঘকালব্যাপী সানুরাগ অনুসন্ধান ও সঙ্কলন এবং বিপুল ব্যয় অভাবে যদিও আমরা বাঙ্গালা