পাতা:বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (দ্বিতীয় সংস্করণ) প্রথম ভাগ.djvu/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা



বঙ্গীয়, অবঙ্গীয় ভারতবাসী বা বৈদেশিক নরনারীর পক্ষে কিরূপ জটিল ও বাঙ্গালা শব্দের বিশুদ্ধ উচ্চারণ-নির্ণয় কত দুরূহ বোধ হয়, এবং তাহা ভাষা শিক্ষা ও প্রয়োগক্ষেত্রে কি পরিমাণ বিঘ্ন উৎপাদন ও সংশয় বৃদ্ধি করে, তাহা বলাই বাহুল্য। অভিধানের প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় এবং বর্ত্তমান সংস্করণের উচ্চারণ-কুঞ্চিকায় এই বিপত্তির আভাস দেওয়া হইয়াছে। বাঙ্গালা অভিধানের এই অবাঞ্ছনীয় ক্রটি সংশোধনের জন্য প্রথমে মূল শব্দের পর “()” এইরূপ বন্ধনীর মধ্যে বিশুদ্ধ উচ্চারণের নিকটতম বানান প্রদর্শিত হইয়াছিল।[১] কিন্তু স্থান-সঙ্কোচনার্থ তাহা[২] বর্জ্জন করিয়া এক্ষণে প্রত্যেকটি শব্দ স্বত উচ্চার্য্য করিবার জন্য বর্ণশীর্ষে উচ্চারণ-দ্যোতক উদ্ভাবিত চিহ্ন প্রকটিত করা হইল; এবং একটি বিস্তারিত উচ্চারণ-কুঞ্চিকা গ্রন্থের প্রারম্ভকাংশে ও তাহার সংক্ষিপ্তসার প্রতি পৃষ্ঠাতলে সর্ব্বসাধারণের সুবিধার্থ সন্নিবেশিত হইল।

 মূল শব্দকে স্বত উচ্চার্য্য করিবার প্রণালী, স্থান সঙ্ক্ষেপক চিহ্নাদি ব্যবহার, অল্প স্থানের মধ্যে সমধিক শব্দসংখ্যা ও তৎপর্য্যায়ের সমাবেশ, বিবিধ উপায়ে স্থানের অপচয় নিবারক বর্ণ, শব্দ ও পঙ্‌ক্তি-বিন্যাস, বুৎপত্তিগত বা মুখ্য ও গৌনার্থ, তান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক অর্থ, বিশেষার্থ, অর্থ-ভাবাদির সূক্ষ্ম তাৎপর্য্য-বৈভিন্ন্য ও দ্ব্যর্থাদি সুগম-করণ; শব্দ-প্রয়োগ-প্রদর্শন স্থলে সংস্কৃত গ্রন্থাদি হইতে বাক্য বা বাক্যাংশ উদ্ধার না করিয়া প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক বাঙ্গালা গ্রন্থ-পত্রাদি, প্রবাদ, দলীল, নথিপত্র, গীত, পদাবলী, গ্রাম্যছড়া, গাথা ও দোহাদির অংশোদ্ধার, প্রচলন-বাহুল্যে-বঙ্গীভূত বৈদেশিক শব্দাদি গ্রহণ, সংস্কৃত ব্যাকরণানুমোদিত সূত্রসিদ্ধ কিন্তু বঙ্গভাষা ও সাহিত্যে অপ্রচলিত এরূপ শব্দ ও তাহার ‘কলে-ফেলা স্ত্রীলিঙ্গরূপ, যাহার প্রয়োগ এমন কি উল্লেখমাত্র বঙ্গীয় সাহিত্যিক ও ভাষা বৈজ্ঞানিকগণের হাস্যোদ্রেক করিতে পারে তাহার বর্জ্জন, এবং সর্ব্বসাধারণের প্রয়োজন-সাধকতার উৎকর্ষ-সম্পাদনের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়াই “বাঙ্গালী ভাষার অভিধান” সঙ্কলিত হইয়াছে।

 অভিধান প্রকৃতপক্ষে শব্দ ও ভাষা-ভাণ্ডারের চাবি এবং তাহার সুবিশাল সৌধ অসংখ্য সুরক্ষিত বদ্ধ-কক্ষ-সমন্বিতবৎ। এই চাবি বা কুঞ্চিকা কক্ষদ্বারগুলি অবলীলাক্রমে উন্মুক্ত করিয়া দিবার উপযোগী করিয়া নির্ম্মাণ করিতে পারিলেই তাহার সার্থকতা। ইংরেজীতে এইরূপ চাবির নাম “master key”। বাঙ্গালা ভাষার অভিধানকে বাঙ্গালা ভাষাভাণ্ডারদ্বারগুলির উদ্‌ঘাটন করিবার মত সেইরূপ সেরা চাবির আদর্শে গড়িয়া তোলা আমার ন্যায় রুগ্ন, দুর্ব্বল, সীমাবদ্ধ-জ্ঞান ব্যক্তির একার চেষ্টার অসাধ্য। তথাপি সর্ব্বসাধারণের প্রয়োজন-সাধকতা (utility) এবং শব্দাভিধানের (lexicon) উপযোগিতার উৎকৰ্ষবিধানের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া এবং সভ্যজগতের বিশ্বভাষা-ভাণ্ডারের প্রধান প্রধান শব্দকোষের পার্শ্বে এই অতি প্রাচীন সভ্য

  1. ১ম সংস্করণের ভূমিকা, পৃ. ৩৫-৩৯ দ্রঃ।
  2. respelling.