পাতা:বাঙ্গালীর গান - দুর্গাদাস লাহিড়ী.pdf/৯১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৮২২
বাঙালীর গান।

 আমি না করিলে কে করিবে
 আর উদ্ধার এই দেশ?’
তখন সকলে বলিল———বাহবা বাহবা বাহবা বেশ
 নন্দর ভাই কলেরায় মরে,
 দেখিবে তাহারে কেবা?
সকলে বলিল ‘যাওনা নন্দ করনা ভায়ের সেবা;
নন্দ বলিল ‘ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই,
না হয় দিলাম, কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
 বাঁচাটা আমাব অতি দরকার,
 ভেবে দেখি চারিদিক;
 তখন সকলে বলিল——
 হাঁ হাঁ হাঁ তা বটে তা বটে ঠিক।
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির;
গালি দিয়া সবে গদ্যে পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য, দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশগুণ।
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল
তখন সকলে বলিল———বাহবা বাহবা নন্দলাল।
নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি
সাহেব আসিয়া গলাটী তাহার টিপিয়া ধরিল খালি
নন্দ বলিল ‘আহাহা কর কি কর কি ছাড়না ছাই
 কি হবে দেশের গলাটিপুনিতে
 আমি যদি মরে যাই?
বল ক’বিঘৎ নাকে দিব খৎ, যা বল করিব তাহা
তখন সকলে বলিল———বাহবা বাহবা বাহৰা বাহা
 নন্দ বাড়ীর হত না বাহির
 কোথা কি ঘটে কি জানি;
 চড়িত না গাড়ী, কি জানি
 কখন উলটায় গাড়ীধানি;
 নৌকা ফি সন ডুবিছে ভীষণ,
 রেলে ‘কলিশন’ হয়;
হাঁটিতে সর্প, কুক্কুর আর গাড়ি-চাপা-পড়া ভয়;
তাই ওয়ে শুয়ে কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল,
 সকলে বলিল———ভ্যালারে নন্দ
 বেঁচে থাক চির কাল।


স্ত্রী উমেদার।

যদি জান‍্তে চান ঠিক কি রকমে স্ত্রী চাই
 ফর্সা কি কালো কি মাঝারী রং;
 লম্বা কি বেটে; কি ক্ষীণাপীনা;
 দেখতে ঠিক পরী কি দেখতে ঠিক সং;
শোন তাতে আমার আসে যায় না ক অধিক,
 চল‍্তে জানে যদি বাঁচিয়ে ক'দিক
 তার ওপর ডাকে আমায় সোহাগে,
 “পোড়ার মুখো মিন‍্সে ও হতভাগা!”
 তা’হলে হাঃ হাঃ সে ত সোণায় সোহাগা॥
 কপাল এক রত্তি বা কপালে গড়ের মাঠ;
 ভ্রু পুষ্পধনু কি ভ্রু যষ্টিবৎ;
 নীলাব্জনেত্রা কি সে মার্জ্জারাক্ষী;
 তা খুব যায় আসে না আমার এ মত।
 যদি———স্বামীরে কটু সে কয় না ক বেজায়,
 কথায় কথায় পিতৃগৃহে না সে যায়,
 তার ওপর ডাকে আমায় সোহাগে
 “পোড়ার মুখো মিন্সে ও হতভাগা!”
 তা’লে হাঃ হাঃ সে ত সোণায় সোহাগা॥
 বম্বাধরা হোক্‌ কি কাফ্রীবদোষ্ঠা;
 সুদীর্ঘকেশী কি মাথায় টাক;
 সুপংক্তিদন্তা কি গজেন্দ্রদংষ্ট্রা;
 বংশীবৎ নাসা কি চাইনীজি নাক;
 কেবল———যদি সে করে কম তর্ক ও ক্রন্দন,
 তার উপর হয় যদি সুচারু রন্ধন,
 তার উপর ডাকে আমায় সোহাগে,
 “পোড়ার মুখো মিন্সে ও হতভাগা!”
 তা’লে হাঃ হাঃ সে ত সোণায় সোহাগা॥
 গজেন্দ্রগামী কি ভেক-প্রলম্ফী;
 গাহে সে মিঠে কি ডাকে সে কাক;
 বিদ্যায় বাণী কি বিদ্যায় রম্ভা;
 সর্ব্বাঙ্গ থাক কিন্বা নাই সে থাক;——
যদি———রাখে না খোঁজ স্বামী খায় ভাঙ্গ কি চরস,
 ভাণ্ডার পুত্রাদি রক্ষায় সরস,
 তার ওপর ডাকে আমায় সোহাগে,
 “পোড়ার মুখো মিন্সে ও হতভাগা!”
 তা’হলে হাঃ হাঃ সে ত সোণায় সোহাগা॥
 বসন কম ছেঁড়ে ও বাসন কম ভাঙ্গে;