পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লুৎফুন্নিসা

পাটনায় আসিয়া সিরাজের হঠকারিতার জন্য তাঁহাকে কিছুমাত্র তিরস্কার না করিয়া, বরং স্নেহার্দ্র হৃদয়ে আলিঙ্গন ও মুখচুম্বন করিলেন। অনুতপ্ত সিরাজ ক্ষমা ভিক্ষা করিবার বহুপূর্ব্বেই বৃদ্ধ নবাব তাঁহাকে ক্ষমা করিয়াছিলেন।

 আমরা এখানে লুৎফুন্নিসার দয়ার একটা দৃষ্টান্ত উদ্ধার করিয়া দিতেছি। ১৭৫৬ খৃষ্টাব্দে কলিকাতা জয়ের সময় কাশিমবাজারের ইংরাজকুঠীর অধ্যক্ষ ওয়াট্স সাহেব, পত্নী পুত্র কন্যাগণ সহ কাশিমবাজারে বন্দী হ’ন। তাঁহারা প্রধানতঃ সিরাজমাতা আমিনা বেগমের অনুকম্পায় জীবনলাভ করিয়াছিলেন। তিনি গোপনে ওয়াট্‌স সাহেবের পত্নী ও পুত্রকন্যাগণকে আপনার মহলের মধ্যে ৩৭ দিবস সযত্নে রাখিয়াছিলেন। পরে লুৎফুন্নিসার সহিত পরামর্শ করিয়া তাঁহাদিগকে জলপথে চন্দননগরে ফরাসী গভর্ণারের নিকট পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। এ বিষয় নবাব ঘুণাক্ষরে জানিতে পারিলে যে উভয়ের বিষম অনর্থ ঘটিত, তাহা কাহাকেও আর বলিয়া দিতে হইবে না। রমণী ও বালক-বালিকার দুঃখে তাঁহারা যে শুধু কাতর হইয়াছিলেন, তাহা নহে। একদিন লুৎফুন্নিসা নবাবের নিকট ওয়াট্‌স সাহেবের মুক্তি ভিক্ষা চাহিলেন। নবাবকে বলিলেন—“কুঠিয়াল সাহেব ত আপনার প্রজা—আপনার সন্তান। সন্তানকে কেন ব্যথা দিতেছেন? বাঙ্গালা মুলুকের মালিকের পক্ষে সামান্য একজন ইংরাজ প্রজাকে বন্দী রাখা কখনও উচিত নয়।” তিনি নবাবের পদতলে কৃপাভিক্ষা করিলেন। নবাব লুৎফুন্নিসার পরদুঃখকাতরতায় আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া বুঝাইলেন, ওয়াট্‌স্‌কে বন্দী করিয়া রাখিলেই কলিকাতায় ইংরাজ-বণিকেরা সংযত হইয়া চলিতে শিখিবে। লুৎফুন্নিসার অশ্রুবর্ষণ ও কাতর অনুরোধে নবাবের সংকল্প