পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

ভাসিয়া গেল; অবশেষে তিনি ওয়াট্‌স্‌কে মুক্তি দিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।[১]

 পলাশীর যুদ্ধাবসানে ইংরাজের বিজয়-দুন্দুভি যখন বাজিতেছিল—যখন বন উপবন কম্পিত করিয়া কামান সকল ইংরাজের জয় ঘোষণা করিতেছিল—ভাগীরথী যখন মুষ্টিমেয় ইংরাজ-সেনার অদম্য সাহস ও ক্লাইভের বুদ্ধিকৌশল দেখিয়া স্তম্ভিত হইয়া তরতরবেগে ছুটিতেছিল, তখন হতভাগ্য বাঙ্গালার নবাব সিরাজ, মির্জ্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় মর্ম্মাহত হইয়া ভাবিতেছিলেন—“করি কি?” মুষ্টিমেয় সামান্য অনুচর লইয়া তিনি কি করিতে পারেন? অদৃষ্টের তীব্র উপহাসেব্যথিত সিরাজ চতুর্দ্দিক অন্ধকার দেখিলেন। অদ্য প্রাতে যিনি বাঙ্গালা বিহার উড়িষ্যার দণ্ডমুণ্ডের কর্ত্তা, সায়ংসন্ধ্যায় তিনিই পথের ভিখারী। কল্য যে ইংরাজ-বণিক তাঁহারই অনুগ্রহলাভের জন্য লালায়িত ছিল, অদ্য তাহারা সর্ব্বেসর্ব্বা—মির্জ্জাফর তাহাদের হস্তের ক্রীড়নক। চিন্তা আর তাঁহার ভাল লাগিল না। উপায়ান্তর না দেখিয়া তিনি পলায়ন করিতে কৃতসংকল্প হইলেন। এই সংকল্প শুনিয়া তাঁহার সুখের সময়ের প্রায় সকল আনুচর একে একে তাঁহাকে পরিত্যাগ করিল। কাল বিলম্ব না করিয়া সিরাজ তাঁহার শ্বশুর ইরাজ খাঁর নিকট আপন মন্তব্য প্রকাশ করিলেন, কিন্তু কিছুতেই তিনি তাঁহার সহিত যাইতে সম্মত হইলেন না। ধনরত্ন আত্মসাৎ করিয়া ইরাজ খাঁ গোপনে পলায়ন করিলেন। আশা-ভরসাহীন— সিরাজ একাকী পলায়নের উদ্যোগ করিতেছেন, এমন সময়ে লুৎফুন্নিসা আসিয়া তাঁহার চরণোপান্তে বসিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। স্বামীর সুখে যিনি আত্মহারা হইয়াছিলেন, সেই লুৎফুন্নিসা স্বামীর বিপদে স্বামীর সহিত পলায়ন


  1. “Parochial Annals of Bengal”—H. B. Hyde. P. 158.