পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

কুলি খাঁ নওয়াজিসের গৃহে সর্ব্বময় কর্ত্তা হইয়া, আলিবর্দ্দী খাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা নওয়াজিস-পত্নী ঘসিটী বেগমের প্রণয়পাত্র হইয়া, প্রভুর ভালবাসার অপূর্ব্ব প্রতিশোধ দিয়াছিলেন! অল্পদিন পরে সিরাজমাতা আমিনা বেগমের সহিতও তাঁহার অবৈধ প্রণয়-কথা প্রকাশ হইয়া পড়ে। ঐতিহাসিকেরা একবাক্যে স্পষ্টভাবেই তাঁহার চরিত্রে কলঙ্কারোপ করিয়াছেন। আর ঐশ্বর্য্যের মধ্যে লালিত পালিত হইয়া—ভোগবিলাসের কোমল অঙ্কে শয়ন করিয়া, উদ্দাম বাসনা-স্রোতের অনুকূলে চলিলে সংযম শিক্ষার অবসর থাকে কি? বৃদ্ধা মহিষী এ সকল দেখিয়াও দেখিতেন না। পরে সিরাজ হোসেন কুলিকে হত্যা করাইয়া দুরপনেয় কলঙ্ক-কালিমা মোচন করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন।

 মুতাক্ষরীণকার গোলাম হোসেন, আলিবর্দ্দী খাঁর কন্যাদ্বয় ও সিরাজ-চরিত্র সম্বন্ধে লিখিয়াছেন যে, নবাবের শ্রীবৃদ্ধিকালে তাঁহার পরিবারবর্গ যেরূপ লাম্পট্য, কদাচার প্রভৃতির বশীভূত হইয়াছিলেন, তৎসমুদয় ভদ্র ভাষায় প্রকাশ করা মার্জ্জিতরুচির পরিচায়ক নহে। তাঁহাদের এই সমস্ত দুষ্কৃতিভার তাঁহার অকলঙ্ককুলে কালিমা ঢালিয়া দিয়াছে। তাঁহার কন্যারা ও প্রিয়তম সিরাজ যেরূপ ঘৃণার্হ কদাচার করিতেন, তাহা সকলের পক্ষেই সমান অযশঙ্কর।

 পূর্ব্বে উক্ত হইয়াছে আমিনা সিরাজকে ইংরাজদিগের সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইতে নিষেধ করিয়াছিলেন; কিন্তু ইহা যে কেবল সিরাজের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য, তাহা বোধ হয় না—ইহার মূলেও একটু স্বার্থ নিহিত ছিল বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। বেগমদিগের ইংরাজের প্রতি সহানুভূতি দেখাইবার একটা বিশেষ কারণও ছিল। তাঁহারা ব্যবসা-বাণিজ্য দ্বারা অর্থোপার্জ্জন করিতেন। বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত রাখিতে হইলে, ইংরাজ-বণিক্‌দিগের সহিত সদ্ভাব রক্ষা একান্ত প্রয়োজন;

২০