পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমিনা

আমরা মীরণের নিকট কোন অপরাধেই অপরাধী নহি; বরং আমরা তাহার মঙ্গলের নিমিত্ত সতত প্রয়াস পাইয়াছি, কিন্তু তাহার নিকট হইতে এই নিষ্ঠুর দণ্ডাজ্ঞা ব্যতীত আর কিছুই পাইলাম না। সেই জন্য, আমরা আশা করি, আমাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণার্থ পাপিষ্ঠের পাপ-মস্তক চূর্ণ করিবার জন্য আপনার বজ্র প্রেরণ করিবেন।”[১]

 ইহার পর দুই ভগিনী রেকাত নমাজ পাঠ করিয়া, কুক্ষিতলে কোরাণ সরিফ ধারণ পূর্ব্বক নদীবক্ষে ঝম্প প্রদান করিয়া সর্ব্ব যন্ত্রণা হইতে বিমুক্ত হইলেন।[২] প্রবাদ আছে, সেই রাত্রিতেই না কি বজ্রাঘাতে মীরণ মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছিল।

 আমিনা জীবন-মরণের সন্ধিস্থলে আসিয়া, ভগবানের উদ্দেশে যে সকল কথা বলিয়াছেন, তাহা হইতে স্পষ্ট বুঝা যায়, অনুতাপানলে তখন তাঁহার হৃদয় পবিত্র হইয়াছে—স্বর্ণের যেটুকু মলিনত্ব, যেটুকু মলামাটি ছিল, তাহা দূর হইয়াছে—পাপের কালিমা ঘুচিয়া গিয়াছে—ঈশ্বরের উপর নির্ভরতা আসিয়াছে—জীবনের প্রতি মায়া নাই, মমতা নাই—ঘসিটির মত নারীজনোচিত দুর্ব্বলতার তিনি বশবর্ত্তিনী হ’ন নাই—তাঁহার নয়ন বহিয়া অশ্রুও প্রবাহিত হয় নাই। শোভন আল্লার ন্যায়-বিচারে যাহার সম্পূর্ণ বিশ্বাস, তাহার আবার মরণ ভয়? মরণ ত সুখের—মরণই অক্ষয় অনন্ত অমৃতের

২৭


  1. Eliott-viii-429.
  2. রিয়াজ-উস-সলাতিন—শ্রীরামপ্রাণ গুপ্ত। পৃঃ ৩৬৪।
     হলওয়েল কিন্তু এই মত পোষণ করেন না। তাঁহার মতে—“মির্জ্জাফর ১৭৬০ খৃষ্টাব্দের জুন মাসে ঘসিটি ও আমিনা বেগম প্রভৃতি সম্রান্ত মহিলাবর্গকে ঢাকার রাজ-কারাগারে হত্যা করাইয়াছিলেন।” (Long's Selections from the Records of the Govt. of India vol. I) কিন্তু তিনি এই মত সমর্থনার্থ কোন প্রমাণাদির উল্লেখ করেন নাই।