পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘসিটী

এবং রাজবল্লভ ঐ সিটিরই দেওয়ান। সতরাং ইংরাজগণ অবিলম্বে রাজবল্লভের প্রস্তাবে সম্মত হইলেন এবং তাঁহার পরিবারবর্গ কলিকাতায় পৌঁছিলে সমাদরে তাঁহাদিগকে আশ্রয় দিয়া রক্ষা করিতে লাগিলেন।

 সিরাজের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সওকৎজঙ্গ, বহুদিন হইতে বাঙ্গালার মসনদ প্রাপ্তির আশা হৃদয়ে পােষণ করিতেছিলেন। যে দিন আলিবর্দ্দী খাঁ সিরাজকে আপন উত্তরাধিকারী বলিয়া নির্দ্দেশ করেন, সেই দিন হইতেই ইঁহার অন্তঃকরণ ঈর্ষাবিষে জর্জ্জরিত হইতেছিল। স্বার্থের হিসাবে ইনিও ঘসিটি বেগমের প্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্তু উভয়েরই অভীষ্টলাভের পথে সিরাজ একমাত্র অন্তরায়। সেইজন্য সমান-বিপদগ্রস্ত বলিয়াই সিরাজের বিরুদ্ধে মিলিত হন। বৃদ্ধ নবাবের মৃত্যুর পর মুহূর্ত্তেই সিরাজ বাঙ্গালার নবাব হইলেন বলিয়া রাজ্যমধ্যে ঘােষণা দেওয়া হইল এবং পরদিনই তিনি মতিঝিল আক্রমণ করিয়া এরূপ কৌশলে অবরােধ করিলেন যে, বাহির হইতে প্রাসাদ-মধ্যে প্রবেশের আর কোনরূপ সম্ভাবনামাত্র রহিল না। প্রাসাদের বেষ্টন-পরিখার উপর যে ঘাসের আস্তরণ বিস্তৃত ছিল, তাহাতে অগ্নিসংযােগ পূর্ব্বক চতুর্দ্দিকে গােলন্দাজ সৈন্য সংস্থাপিত করিলেন। পূর্ণিয়ার নবাবের নিকট হইতে যে সৈন্যসাহায্য অসিবার কথা ছিল, তাহাও এ সময়ে আসিয়া পৌঁছাইতে না পারায়, ঘসিটি কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িলেন এবং এই আকস্মিক দুর্গ অবরােধ সংবাদ তিনি সওকৎজঙ্গকে দিবার অবকাশ পাইলেন না।

 এই কারণে দুর্গস্থিত সৈন্যগণ এক প্রকায় হতাশ হইয়া পড়িল এবং তৃতীয় দিবসের রাত্রিযোগে সকলেই দুর্গ পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিল। এই অবস্থায় আলিবর্দ্দী-বেগম তাঁহার কন্যাকে সিরাজের