বামুনের মেয়ে వెళి ছোট গ্রামখানির মধ্যেই প্রায় চার-পাচটা বাড়ীতে শুভ-বিবাহের আয়োজন চলিয়াছে। আজি সন্ধ্যার বিবাহ । নানা কারণে অরুণ এখন পৰ্য্যস্ত বাসস্থান ও জন্মভূমি পরিত্যাগ করিরার সঙ্কল্প কাৰ্য্যে পরিণত করিয়া তুলিতে পারে না : পূর্বের মত আবার সে কাজ-কৰ্ম্মও স্বরু করিয়াছে—বাহির হস্ততে জীবনে তাহার কোন পরিবর্তনও দেখা যায় না ; কিন্তু একটু লক্ষ্য করিয়া দেখিলেই দেখা যাইতে পারিত যে, দেশের প্রতি মমতাবোধটা তাহার যেন একেবারে অন্তহিত হইয়া গিয়াছে । যে-সকল হিতকর অনুষ্ঠানের সহিত তাহার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সংস্রব ছিল, তাহারা যেন তেমনি দূরে সরিয়া গিয়াছে। গ্রামে সে একঘরে, এতগুলা বিবাহবাটীর কোনটা হইতেই তাহার নিমন্ত্রণ ছিল না—সামাজিকতা রাখিতে তাহার কোথাও যাইবার নাই-—আর সকল বাটীর দরজাই তাহার কাছে রুদ্ধ। সন্ধ্যার পর হইতে তাহার দোতলায় পড়িবার ঘরটিতে সে চুপ করিয়া বসিয়াছিল। শীতের হাওয়া বহিতেছে, কিন্তু তবুও ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করা হয় নাই, সব কয়টাই খোলা খ খ করিতেছিল ; নিৰ্ম্মেঘ নিৰ্ম্মল আকাশের এক প্রাস্ত হইতে অন্য প্রান্ত পৰ্য্যস্ত ত্রয়োদশীর চাদের আলোয় ভাসিয়া যাইড়েছে—তাহারই একটুকরা পিছনের মুক্ত বাতায়নের ভিতর দিয়া আসিয়া তাহার পায়ের কাছে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। তাতার সম্মুখের খোলা বারান্দার অদূরে একটা ছোট নারিকেলবুক্ষের মাথার উপর পাতায়-পাতায় জ্যাৎস্নার আলোক পড়িয়া ঝকৃঝক্ করিতেছিল, সে তাহার প্রতি অৰ্দ্ধ-জাগ্রত অৰ্দ্ধ-নিদ্রাতুরের ন্যায় চাহিয়া কি যে ভাবিতেছিল তাহার কোন ঠিকান ছিল না। পাচক আহারের কথা জিজ্ঞাসা করিতে আসিলে ক্ষুধা নাই বলিয়া তাহাকে বিদায় করিয়া দিল এবং দেওয়ালে একটা
পাতা:বামুনের মেয়ে-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।