বামুনের মেয়ে ● থেকে মানুষের এই লাঞ্ছনা মানুষকে যে বেদনায় কণ্ঠদূর বিদ্ধ করতে পারে, এই কথাটা যে একদিন আমাকে এমন করে অনুভব করতে হবে, এ আমি স্বপ্নেও ভাবিনি সন্ধ্যা । সন্ধ্যা ক্ষণকাল মেীন থাকিয়া কহিল, কিন্তু এ লাঞ্ছনা কি তুমি নিজেই টেনে আনোনি অরুণদা ? অরুণ কহিল, কি জানি। কিন্তু, আচ্ছা সন্ধ্যা, প্রায়শ্চিত্ত করলে কি এর কোন উপায় হয় বলতে পারো ? সন্ধ্যা বলিল, হতে পারে,কিন্তু একদিন আত্মমৰ্য্যাদা হারাবার ভয়ে তুমি রাজি হওনি—আবার আজ যদি নিজেই তাকে বিসর্জন দাওত, আমি বলি অরুণদা, তুমি আর যাই কর, এখানে আর থেকে না। অরুণ কহিল, কিন্তু তোমার ঘৃণা যে সেখানেও আমাকে টিকতে দেবে না । কিন্তু তাতেই বা তোমার কতটুকু ক্ষতি-বৃদ্ধি ? অরুণ কহিল, সন্ধ্যা ! (এ-কথা তুমিও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে পারলে ? সন্ধ্যা বলিল, তুমি যে আমার লজ্জার, আমার সঙ্কোচের আবরণটুকু রাখতে দিলে না অরুণদা ) আভাসে ইঙ্গিতে তোমাকে কতবার জানিয়েচি, সে কিছুতেই হয় না, তবুও তোমার ভিক্ষার জবরদস্তি যেন কোনমতেই শেষ হতে চায় না। বাবা রাজি হতে পারেন, মাও ভুলতে পারেন, কিন্তু আমি ত ভূলতে পারিনে আমি কতবড় বামুনের মেয়ে ! - অরুণ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া বলিল, আর আমি ? সন্ধ্যা বলিল, তুমিও আমার স্বজাতি—কিন্তু তবুও বাঘ অর বেড়াল ত এক নয় অরুণদা। কিন্তু কথাটা বলিয়া ফেলার সঙ্গেসঙ্গেই সে নিজেই যেন মনে মনে শিহরিয়া উঠিল ।
পাতা:বামুনের মেয়ে-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।