বামুনের মেয়ে
লইয়া পড়িলেন। তীক্ষ্ণকণ্ঠে কহিলেন, তুই কে লা? মরণ আর কি, একেবারে গা ঘেঁসে চলেছিস্ যে! চোখে-কানে দেখতে পাস্নে? বলি, মেয়েটার গায়ে তোর আঁচলটা ঠেকিয়ে দিলিনে ত?
দুলে-মেয়েটি ভয়ে জড়-সড় হইয়া বলিল, না মাঠান্, আমি ত হেথা দিয়ে যাচ্চি।
রাসমণি মুখখানা অতিশয় বিকৃত করিয়া কহিলেন, হেথা দিয়ে যাচ্চি! তোর হেথা দিয়ে যাবার দরকার কি লা? ছাগলটা বুঝি তোর? বলি কি জেতের মেয়ে তুই?
আমরা দুলে মাঠান্।
দুলে? অ্যাঁ, এই অ-বেলায় মেয়েটাকে ছুঁয়ে দিয়ে তুই নাওয়ালি?
তাঁহার নাতিনী বলিয়া উঠিল, আমাকে ত ছোঁয়নি ঠাকুমা—
রাসমণি ধমক দিলেন, তুই থাম পোড়ারমুখী। আমি দেখলুম যেন দুলে-ছুঁড়ীর আঁচলের ডগাটা তোর গায়ে ঠেকে গেল। যা—এই পড়ন্তবেলায পুকুরে ডুব দিয়ে মর্ গে যা। দিয়ে তবে বাড়ী ঢুকবি। না বাপু, জাত-জন্ম আর রইল না। ছোটলোকের বড় বাড়বাড়ন্ত হয়েচে, দেবতা বামুন আর গেরাহ্যিই করে না! হারামজাদী, দুলে-পাড়া থেকে ছাগল বাঁধতে এসেচে বামুন-পাড়ার মধ্যে?
দুলে মেয়েটির ভয় ও লজ্জার অবধি ছিল না। সে ছাগশিশুটিকে বুকে তুলিয়া লইয়া শুধু বলিল, মাঠান্, আমি ছুঁইনি।
ছুঁস্নি যদি তবে এ-পাড়ায় এসেছিস্ কেন?
মেয়েটি হাত তুলিয়া অদূরে কোন একটা অদৃশ্য গৃহ নির্দ্দেশ করিয়া কহিল, ঠাকুরমশাই তেনার ওই গইলের ধারে আমাদের থাকতে দিয়েচে। মাকে আর আমাকে দাদামশাই তেইড়ে দিয়েচে না!
যাহারই হোক এবং যেজন্যই হোক, একজনের দুর্গতির ইতিহাসে রাসমণির ক্রুদ্ধ হৃদয় কথঞ্চিত প্রফুল্প হইল এবং এই রুচিকর সংবাদ