বামুনের মেয়ে ●や রাসমণি সদয়-কণ্ঠে কহিলেন, তোর একার দোষ নেই জগো, শুনে আমিও অমনি করে চেয়েছিলুম, মনে হ’লে৷ ববি-ব ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপন দেখচি। জগদ্ধাত্রী বলিলেন, খুলে বল না মাসি কি হয়েচে ? আমি যে আকাশ-পাতাল ভেবে মরে গেলুম। রাসমণি তখন জগদ্ধাত্রীর বাম বাহুটা নিজের মুঠার মধ্যে গ্রহণ করিয়া কানের কাছে মুখ আনিয়া ফিস্ ফিস্ কবিয়া বলিলেন, কথাটা গোপনে রাখিস মা, আহলাদে এখুনি জানাজানি করে ফেলিস্নে—ভাঙচি পড়ে যেতে পারে। আমাকে ছাড়া নাকি চাটুয্যেদাদ আর জন-প্রাণীকে বিশ্বাস করেন না, তাই সকালেষ্ট ডেকে আমাকে বললেন, রাস্ন, জগদ্ধাত্রীকে খবরটা দিয়ে এসো গে দিদি । তার মেয়ের জন্তে আর ভেবে মরতে হবে ন!—আমার হাতেই সঁপে দিয়ে একেবারে রাজার শাশুড়ী হয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে ঘরে বসুক গে। মনে ভাবলাম, আমারও ত বৈকুণ্ঠপুরী শূন্য খ খ করচে– ছেলেটাও মানুষ হচ্ছে না—যাক, এক কাজে ছ’কাজ হবে । একটা ব্রাহ্মণের কুল রক্ষাও করা হবে, গায়ের মেয়ে গায়েই থাকবে। তাদেরও ত সবেমাত্র ওই মেয়েটি— কিন্তু কথাটাকে তিনি রাজার ভাবী শাশুড়ীর মুখের দিকে চাহিয়া আর শেষ করিতে পারিলেন না। শুনিতে শুনিতে জগদ্ধাত্রী একেবারে যেন কাঠ হইয়া গিয়াছিলেন । রাসমণি ব্যস্তভাবে বলিয়া উঠিলেন, কি হ’লে র দেগো ? জগদ্ধাত্রী নিজেকে সামলাইয়া লইয়া একটা নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, না—মাসি, গোলকমামা তোমাকে তামাস করেচেন । তামাস কি লো ? এতটা বয়স হ’লে৷ তামাস কাকে বলে জানিনে ? তা ছাড়া ভাই-বোনে তামাস ?
পাতা:বামুনের মেয়ে-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।