বামুনের মেয়ে brVو ভিতরের কি একটা অত্যন্ত লজ্জা ও ব্যথার ইতিহাস কিছুতেই প্রকাশ করিতে পারিতেছেন না, কিন্তু তাহার বুক ফাটিতেছে। তাতার হঠাৎ মনে হইল, তাহার পিতামহের বহু-বিবাহের সহিত ইহার কি যেন একটা ঘনিষ্ঠ সংস্রব আছে । খানিকক্ষণ নিঃশব্দে থাকিয় সে সলজে চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করিল, সত্যিই কি ঠাকুরমা, আমাদের মধ্যে খুব বেশি অনাচার প্রবেশ করেচে ? যা নিয়ে আমরা এত গৰ্ব্ব করি তার কি অনেকখানিষ্ট ভুয়ো ? পিতামহী কহিলেন, এর যে কতখানি ভূয়ো সে যে আমার চেয়ে কেউ বেশি জানে না । কিন্তু কথাটা উচ্চারণ করিতেও যে র্তাহার চোখে জল আসিয়া পড়িল, তাহা সন্ধ্যার অন্ধকারেও সন্ধ্যার অবিদিত রহিল না । তিনি হাত দিয়া চোখ-দুটি মুছিয়া ফেলিয়া ধীরে ধীরে বলিলেন, কিন্তু এখন আমি মাঝে মাঝে কি মনে করি জানিস্ সন্ধ্যা ? মানুষে মানুষে ব্যবধানের এই যে মানুষের হাতে-গড়া গণ্ডী, এ কখনো ভগবানের নিয়ম নয়। তার প্রকাশ্ব মিলনের মুক্ত সিংহদ্বারে মানুষে যতই কাটার উপর কাটা চাপায়, ততই গোপন গহবরে তার অত্যাচারের বেড়া অনাচারে শান্তচ্ছিদ্র হতে থাকে। তাদের মধ্যে দিয়ে তখন পাপ আর আবর্জনাই কেবল লুকিয়ে প্রবেশ করে। অতঃপর কিছুক্ষণ পৰ্য্যন্ত উভয়েই নিঃশব্দে স্থির হইয়া বসিয়া রহিলেন । সন্ধ্যার নিশ্চয় মনে হইতে লাগিল, ইহার সহিত তাহার পিতামহের বহু-বিবাহের সত্যই কি একটা কদৰ্য্য সম্বন্ধ আছে এবং কিছু না বুঝিয়াও তাহার কেমন যেন ভয় করিতে লাগি । ঠাকুরমা বলিলেন, যাও দিদি, ঠাকুর-ঘরের কাজটি সেরে ফেলো গে, নইলে তোমার মা বড় রাগ করবেন। সন্ধ্যা অন্ত্যমনস্কভাবে জবাব দিল, তিনি নিজেই করে নেবেন
পাতা:বামুনের মেয়ে-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।