পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরবিন্দের পত্রের ফল ফলিল ܘ ܘ অটল শান্তির মাঝে বসিয়া থাকিতাম। কখন কেহ যেন একখণ্ড বরফ আমার মাথা বা বুকের মাঝে রাখিয়া দিত। এই দীর্ঘ বার বৎসরে কত ব্যাপার কত অভিনব অনুভূতিই যে হইয়াছে, তাহা লিখিতে গেলে এমন আর একখানি পুস্তক হইয়া পড়িবে। মোটের উপর এই বুঝিলাম যে ভগবান সত্য, তাহাকে দেখি নাই বটে, কিন্তু র্তাহার বহু বিভূতি অনুভব করিলাম-বুঝিলাম। এই জগৎই সব নয়। মানব-জ্ঞানের মাঝে পারদার পর পারদ, লোকের পর লোক, ধামের পর ধাম আছে ; একটি সূৰ্য্যকণার মাঝে চতুৰ্দশ ভুবন দুলিতেছে। তাহার পর দ্বীপান্তরের শেষ বৎসর আমার সাধনা ফুরাইয়া আসিল । যেন এতবড় অন্তমুখী গতি কোথায় পাথরে বাধিয়া গেল, আমি অতি শুষ্ক ভাবিহীন নীরস জীবনে ভাসিয়া উঠিলাম। লুপ্ত ক্ষীণ প্ৰবৃত্তি কামনা সব আবার কোথা হইতে যেন মাথা তুলিতে লাগিল। এত দিন লাগিয়াছিল আমার ঐ একটি কথা বুঝিতে-সকল ক্রিয়া ত্যাগ করিতে, অরবিন্দের সমর্পণ যোগের জন্য প্ৰস্তুত হইতে । এই শেষ বৎসরের আরম্ভেই আমার মন প্ৰাণ ভরিয়া এই ধ্রুব বিশ্বাস জাগিয়া উঠিল যে, আমি জেল হইতে মুক্ত হইব। কারাজীবন আমার ফুরাইয়াছে, তপোভূমি ভারত আমায় টানিতেছে। গীতার সেই কথা স্মরণ হইল, “নহি কল্যাণকৃৎ কশ্চিদ্দুৰ্গতিং তাত গচ্ছতি”। আমার এ সাধনা ত স্তম্ভিত হইয়া থাকিবার নয়, পরম ধামের স্বর্ণ দুয়ার এতখানি দুলিয়া উঠিয়া, এতখানি মুক্ত হইয়া ত আবার রুদ্ধ হইবার নয়। এ সাধনা পূর্ণ করিতে ভারতে যাওয়া আমার অনিবাৰ্য্য, আমি এই বিশ্বাস অন্তরের অন্তরে লুকাইয়া দিন গণিতে লাগিলাম।