পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুরাটে দক্ষযজ্ঞ-নাশের পালা (R ক্ষীণজীবী নিরীহ মানুষটিকে তৃতীয় শ্রেণী হইতে খুজিয়া বাহির করিতে করিতে, এদিকে ট্রেণ ছাড়িবার সময় হইয়া যায়। আমাদের তো রাত্রে নিদ্রা নাই, পেটে স্থান নাই, সেজদার গলার মালায় গাড়ী বোঝাই ! বোধহয় নাগপুর আর অমরাবতীতে কয়েক ঘণ্টার জন্য নামিতে হইয়াছিল। সেখানে অরবিন্দের বক্তৃত হইল, কিন্তু বক্তৃতা-স্থানে লোক-সমুদ্র ঠেলিয়া যায় কার সাধ্য। তখন সবে সাতশ’ বছরের ঘুম ভাঙিয়া এ পোড়া কুম্ভকর্ণের দেশ জাগিতেছে। প্ৰথম নেশায় সবাই পাগল, নাচিয়া কুঁদিয়া হল্লায় আকাশ ফাটাইয়া কি যে করিবে, মানুষ ঠাহর করিতে পারিতেছে না । সেজদাকে ধরিয়া যেখানে লইয়া বসাইয়া দেয়, নীরব মানুষটি সেইখানেই বসিয়া থাকেন, আর সবাই নির্নিমেষ নেত্ৰে চাহিয়া চাহিয়া দেখে। অতবড় জনসজেঘ তঁর বক্তৃতা বড় বেশী দূর শোনা যায় না, তবু সহস্ৰ সহস্র মানুষ ভিড় করিয়া দাড়াইয়া থাকে। নিজের উচ্চ-পদ, মান, সন্ত্রম ছাড়িয়া জাতীয় পরিষদে সামান্য মাহিনায় দেশের সেবা করিতে আসিয়াছে, সে কেমন মানুষ । বন্দেমাতরমের অগ্নিমন্ত্ৰ দিয়া সাতশতাব্দীর এত বড় আচল জগদল পাথর নাড়িয়া এই পাষাণে ভাব-গঙ্গা বহাইতেছে, সে কেমন জন ! তাই দেখিতেই স্থানে স্থানে এত ভিড়। তখন ভারত বহুযুগ পরে আবার প্রথম ত্যাগের মহিমা বুঝিয়াছে, ইতিমধ্যেই মেদিনীপুরের প্ৰাদেশিক কনফারেন্সে এত দিনের নিত্য পূজার মাটির ঠাকুরগুলি বিসর্জন হইয়া চুকিয়াছেন-পুরাতন নেতাদের প্রায় অন্ন উঠিয়াছে। তাহার উপর রণচণ্ডী আসিবেন কিনা—তাই তঁাহার পদভরে তখন এত পূর্ব হইতেই ধরা টলমল, মানুষও উন্মনা ও চঞ্চল ; পায়ের তলা হইতে এতদিনকার সুখের আশ্রয় জীবনের ভিত নড়িয়া যাওয়ায় সকলেই তখন পুরাতনে অবিশ্বাসী ও নূতনের জন্য সকল কিছুই ভাঙিয়া ধ্বসাইয়া নবীনের ভিত গাড়িতে ব্যস্ত। সবাই যেন একটি কুঠার-হস্ত মারমুখী পরশুরাম। বোম্বাইয়ে গিয়া কাহার বাড়ী ছিলাম এখন।