পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ >२ ] যেরূপে রামরাবণের যুদ্ধ-বৰ্ণন-সম্বন্ধে কোনও উপমা দেখিতে না পাইয়, “রামরাবণয়োযুদ্ধং রামরারণয়োরিব” এই কথা বলিয়াছেন, সেইরূপ রামায়ণের কবিত্ব বাল্মীকিরই সস্তবে এবং বাল্মীকিও রামায়ণের প্রকৃত অনুরূপ প্রণয়ন-কৰ্ত্ত । টীকাকার রামানুজ বলিয়াছেন ;– “কৃজন্তং রামরামেতি মধুরং মধুরাক্ষরম। আরূঢ়কবিতাশীখং বন্দে বাল্মীকিকোকিলম।” তাৎপৰ্য্য,--“আমি বাল্মীকি-স্বরূপ কোকিলকে অভিবাদন করি ; এই কোকিল কবিতাশাখায় আরোহণ করিয়া, মধুরস্বরে রাম রাম শব্দে কৃজন করিতেছেন।” আমরা অন্যমত হইয়া এই উক্তির সমর্থন করি । কিন্তু তাই বলিয়া রামানুজের মঙ্গলাচরণেরএক স্থলে যাহা প্রকাশ পাইয়াছে, আমরা তাহা সাদরে গ্রহণ করিতে প্রস্তুত হইতে পারি না ; কারণ, তিনি বাল্মীকির রাম-কথাকে সিংহনাদের সঙ্গে তুলনা করিয়াছেন। যদি কালভয়নিবারণের জন্য ঐরূপ উপমা দেওয়া হইত, তাহা হইলে কোনও কথাই ছিল না ; কিন্তু তাহা না বলিয়া, যে গর্জনে সাধারণের শঙ্কা সমুপস্থিত হয়, তাহার সহিত বাল্মীকি-উক্তির সাদৃশ্য ঘটিলে, গৌরবের অপলাপ হয় বলিয়াই অামাদের বিশ্বাস। যথার্থ বিবেচনা করিয়া দেখিলে, রামায়ণকে একটি প্রধান পাদপ ৰলিয়া মনে করা যাইতে পারে। সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম ইহার অমল বীজ, চিন্ময় ইহার অঙ্কুর, এই বৃক্ষ স্থবিস্তৃত সপ্ত কাণ্ডে বিভক্ত, ঋষিগণ ইহার আলবালস্বরূপে মূলদেশ রক্ষা করিতেছেন, তত্ত্বজ্ঞানপূর্ণ সহস্র পত্রে ইহা সুশোভিত, ইহা পঞ্চশত শাখায় বিরাজিত ; এই বৃক্ষ ব্রহ্মপ্রাপ্তিফল প্রদান করিয়া থাকে। ইহার ফল সকল নিত্য স্থপঙ্ক, সুপাদেয় ও অনন্তকাল রসনার তৃপ্তিকর। এই গ্রন্থে যেরূপ শিক্ষা ও সন্থপদেশ নিহিত আছে, অন্যত্র সেরূপ পাওয়া যায় কি না সন্দেহ । বলিতে কি, গ্ৰন্থখানি কেনল যে রসভাবপূর্ণ, চিত্তচমৎকারক ও মনোহারক, এরূপ নহে ; ইহা পুরাকালীন আচার-ব্যহহার, সমাজধৰ্ম্ম, পাতিব্ৰত্য, সৌভ্রাত্র ও রাজধৰ্ম্ম প্রভৃতির অাদর্শস্থল। যদিও ভাগ্যদোষে সে সকল চিহ্ন, তত্তাবৎ অনুষ্ঠান ও সে সুখের দিন এক্ষণে অন্তৰ্হিত, কিন্তু রামায়ণের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে, স্মৃতির সাহায্যে—কবির সুচিত্রে—রচনার পাণ্ডিত্যে তাঁহা সুস্পষ্টভাবে এখনও যেন প্রত্যক্ষের স্থায় দৃশ্যমূৰ্ত্তিতে বিরাজমান রহিয়াছে। কোনও কোনও সূক্ষদশী পণ্ডিতের মতে এই গ্রন্থ করুণরসাত্মক ; অর্থাৎ ইহাতে করুণরসের প্রাধান্ত আছে। কাহারও কাহারও মতে যুদ্ধাদি বর্ণন-নিবন্ধন ইহাতে বীর-রসের বহুলতা দৃষ্ট হইয়া থাকে। সুপ্রসিদ্ধ টীকাকার নাগোজী ভট্ট বলেন যে— “বয়স্তু শৃঙ্গার এব প্রধান সীতায়শ্চিরিতং মহদিত্যুক্তেঃ ।” তিনি বলেন,—“আমরা শৃঙ্গার-রসকে প্রধান বলিয়া স্বীকার করি ; কারণ, সীতার মহচচরিত্র ইহার মুখ্য অঙ্গ।” আমাদের বিবেচনায় নাগোজী ভটের উক্তি অপ্রামাণিক বলিয়া বোধ হয় না । আলঙ্কারিকেরা শৃঙ্গারকে সংযোগ ও বিপ্ৰলন্ত এই দুই ভাগে বিভক্ত করিয়াছেন, সুতরাং তাহীদের মতে সীতার সহিত সীতাপতির সহবাসকাল সংযোগ ও তৎপরে সীতাহরণ হইতে উদ্ধারের পূর্বকাল পর্য্যন্ত বিপ্রলস্তের প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্তস্থল। এই গ্রন্থে রামবিরহে দশরথ ও কৌশল্যাদির যিলাপ ও পরিতাপ করুণরসের প্রস্রবণ, শূৰ্পণখাসংযোগ হাস্যরসের প্রদীপ্ত চিত্র, হনুমান প্রভৃতি বানরগণের কার্য্য বীর-রসের অদ্বিতীয় আদর্শস্থল, রাম-রাবণের যুদ্ধ রৌদ্ররসের দিব্য মূৰ্ত্তি, বিরাধ ও কবন্ধদিব্যাপার অযুতের পরাকাষ্ঠ, রামের চরিত্র ও ব্যবহার-পরম্পরা শান্তরসের অসীম অনুপম