পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ S 9 J নিদর্শনস্থল। যাহা হউক, রামায়ণের বিস্তৃত সমালোচনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নহে ; তবে সংক্ষেপত: গুটিকত বিষয় পৰ্য্যালোচনা করিয়া গ্রন্থকৰ্ত্তার শক্তির কথঞ্চিৎ আভাস দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। মনুসংহিতার ১০ম অধ্যায়ের ৮১৮২ শ্লোকে প্রকাশ যে,— “অজীবংস্তু যথোজেন ব্রাহ্মণঃ স্বেন কৰ্ম্মণা | জীবেৎ ক্ষত্রিয়ধৰ্ম্মেণ স হাস্য প্রত্যনন্তরঃ । উভাভ্যামপ্যজীবংস্তু কথং স্যাদিতি চেস্তবেৎ। কৃষিগোরক্ষমাস্থায় জীবেদ্বৈশ্বস্ত জীবিকাম।” তাৎপৰ্য্য,—“যদি ব্রাহ্মণ অধ্যাপনাদি নির্দিষ্ট কৰ্ম্ম করিয়া, কুটুম্ব-প্রতিপালন পূর্বক জীবিকা নির্বাহ করিতে না পারেন, তাহা হইলে অনন্তর ক্ষাভ্রধৰ্ম্ম— অর্থাৎ গ্রামাদি রক্ষণে দিনপাত করিবেন। যদি নিজ ধৰ্ম্ম বা ক্ষত্রিয়ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াও জীবিকা-নির্বাহ না ঘটে, তাহা হইলে কৃষি ও গোরক্ষণাদি বৈশ্ববৃত্তি অবলম্বন করিবেন।” রামায়ণেও এ নিয়মের অন্যথাভাব দৃষ্ট হয় না। ভৎকালে গর্গবংশসস্তৃত ত্ৰিজট নামে ব্রাহ্মণ বৈশ্ববৃত্তিঅবলম্বনে দিনাতিপাত করিতেন। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যাদি সকলেই আপনাদের নির্দিষ্ট ব্যবসায়ে জীবনযাত্রা নিৰ্বাহ করিতেন । র্যাহারা তপস্বী বা সংসারত্যাগী, তাহাদের বিষয় প্রস্তাবনার বহিভূত বলিয়া আমরা তদ্ভৰ্ণনে নিরস্ত হইলাম। তৎকালে মুখ্য ও গৌণ দ্বিবিধ ব্রহ্মচর্য্যের ব্যবস্থা ছিল। ব্রাহ্মণগণের স্বধৰ্ম্মে অবস্থিতি ও তদনুষ্ঠানের নাম ব্ৰহ্মচৰ্য্য। মমুর মতে যজন, বাজন, অধ্যয়ন, অধ্যাপন, দান ও প্রতিগ্রহ এই কয়েকটি ব্রাহ্মণের নির্দিষ্ট কাৰ্য্য, ইহাই গৌণ ব্রহ্মচৰ্য্য। এই ব্রহ্মচৰ্য্যাবলম্বী ব্রাহ্মণের সংসারী হইয়া গৃহধৰ্ম্ম পালন করিয়া থাকেন এবং শ্রুতিস্থতি-বিহিত আচারের অনুবর্তী হইয়া চলেন। অপর সম্প্রদায় মুখ্য ব্রহ্মচারী ; হঁহারা সংসারত্যাগী, পরিব্রাজক ; ছত্র, পাদুকা ও কমণ্ডলুথারী। রামায়ণে প্রকাশ — “শ্লক্ষ্ণকাষায়সংবীতঃ শিখা ছত্ৰী উপানহী । বামে চাংসেহবসজ্যাথ শুভে যষ্টিকমণ্ডলু।” তাৎপৰ্য্য,—“র্তাহীদের পরিধেয় বসন শ্লক্ষকাষায়বস্ত্র, মস্তকে শিখা এবং ছত্র, পায়ে পাদুকা, বামস্বন্ধে যঃি ও কমণ্ডলু।” তাপসগণের আশ্ৰম-সম্বন্ধে বাল্মীকি কি উৎকৃষ্ট বর্ণনাই করিয়াছেন । “প্রবিশ্ব তু মহারণ্যং দণ্ডকারণ্যমাত্মবান। রামো দদশ দুৰ্দ্ধৰ্ষস্তাপসাশ্রমমণ্ডলম ৷ কুশচারপরিক্ষিপ্তং ব্রাহ্ম্য লক্ষ্যা সমাৰ্বতম। যথা প্রদীপ্তং দুর্দশং গগনে স্বৰ্য্যমণ্ডলম্। শরণ্যং সৰ্ব্বভূতানাং মুসংস্কৃষ্টাজিরং সদা। মৃগৈবহুভিরাকীর্ণং পক্ষিসঙ্ঘৈঃ সমাবৃতম্ ॥ পূজিতঞ্চোপনৃত্যুঞ্চ নিত্যমঙ্গরসাং গণৈঃ । বিশালৈরগ্নিশরণৈঃ ক্ৰগ ভাগুৈরজিনৈঃ কুশৈঃ ॥ স্বৰ্য্যবৈশ্বানরাভৈশ্চ পুরাণেমুনিভিযুতম্। পুণ্যৈশ্চ নিয়তাহারৈঃ শোভিতং পরমর্ষিভি: ॥” আরণ্যকাও ১১-৭ তাৎপৰ্য্য,—“আত্মবান দুৰ্দ্ধৰ্ষ রামচন্দ্র মহারণ্য দণ্ডকবনে প্রবেশ করিয়া, তপস্বীদিগের আশ্রমসমূহ দেখিতে লাগিলেন। সেখানে কুশচীর ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে। আকাশস্থ দুর্দশ প্রদীপ্ত সৌর তেজের স্যায় ব্রাহ্মী শ্ৰী সতত উজ্জ্বল । তত্রত্য প্রাঙ্গণভাগ অলঙ্কত ও সর্বভূতের শরণ্য। সেখানে নানাজাতি পক্ষী ও মৃগগণ বিচরণ করিতেছে। তাহারা অঙ্গরাভীলিত সেই স্থানে নিয়ত নৃত্য করিয়া থাকে। বিশাল অগ্নিহোত্র, ক্ৰগ ভাও, অজিন ও কুশসমুছে সেই স্থান পরিব্যাপ্ত। স্বৰ্য্য ও অগ্নিতুল্য তেজস্বী ফলমূলাহারী পরম-কারুণিক পরম পুণ্যবান মহর্ষিগণ তখায় শোভা পাইতেছেন।”