পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-8 করিলেন এবং সহস্ৰ সহস্ৰ লোকের সমক্ষে শরাসন আকর্ষণ করিলেন । তিনি দেখিতে দেখিতে তাহাতে জ্যারোপণ করিয়া সেই ধনু আকর্ষণ করিতেই সেই ধনুর মধ্যস্থল ভগ্ন হইয়া গেল। এই সময়ে বজনিনাদের স্যায় ঘোর শব্দ হইল, গিরি বিদীর্ণ হইলে ভূভাগ যেরূপ কম্পিত হয়, তখন পৃথিবী সেইরূপ কম্পিত হইল। এই ভীষণ শব্দে সকল লোকেই মূচ্ছিত হইল, কেবল রামলক্ষণ, জনক ও বিশ্বামিত্র স্থির ভাবে রহিলেন । অনন্তর সকলে আশ্বস্ত হইলে, এত দিন জানকী-বিবাহ-জন্য জনক রাজার অন্তরে যে ভয় ছিল, তাহ বিদূরিত হইল, তিনি তখন বিশ্বামিত্রকে কহিলেন । ১১-২০ হে ভগবন! দশরথনন্দন রামচন্দ্র যে এতদূর শক্তিসম্পন্ন, তাহা অামি মনেও চিন্তা করি নাই, বাস্তবিক, ইহা অপ্রতর্ক্য ও অচিন্তনীয় ব্যাপার। আমার কন্যা সীতা দশরথনন্দন রামকে পতিরূপে লাভ করিয়া জনককুলে কীৰ্ত্তি বিস্তার করিবেই । হে কৌশিক ! আমি সীতার বিবাহের জন্য পণ করিয়াছিলাম, এক্ষণে সে পণ রক্ষা পাইয়াছে, অতএব প্রাণাধিক জানকীকে রাম-হস্তে সম্প্রদান করিব। হে ব্ৰহ্মন! আপনার আজ্ঞা পাইলেই দূতগণ ত্বরিতগমনে রথারোহণে অযোধ্যায় গমন করুক। তাহারা অমুনয়বিনয়সহকারে ধনুৰ্ভঙ্গ নিবন্ধন শ্রীরামের সীতাপ্রাপ্তি-বিষয়ক সংবাদ নৃপতি দশরথকে নিবেদন করুক। বিশ্বামিত্রপ্রভাবে রামলক্ষণ সুরক্ষিত হইয়া নিরাপদে অবস্থিতি করিতেছেন, এই কথা জানাইয়া, গ্রীতমনে অযোধ্যাধিপকে এখানে আনয়ন করুক। ১ । পাদাঙ্গুলীর দ্বারা উত্তোলন করিা হয়ে দ্বার। গ্রহণ করিলেন। পদ্মপুরাণে এই কথাই আছে—“রামোপি তদ্বমুঃ কোটিং স্পৃষ্ঠা পাদাঙ্গুলান্ততঃ । উন্নত চাপমারোপা বভঞ্জে মোহিত জনাঃ ” অষ্টান্ত ভারি পদার্থক পদাঙ্গুলি দ্বার মধ্যভাগ পর্যন্ত উন্নমত করা ও মধাদেশ ধরিয়া উত্তোলন অত্যন্ত বলের কার্যা । ২। "কস্ত বরয়তে রূপং মাতা বিত্ত পিত। গুণং, বান্ধবা; কুলমিচ্ছত্তি”—ইত্যাদি লোকপ্রসিদ্ধ বিবাহোচিত গুণ সকল পূর্ণ হওয়ায় সীতা পাৰ্ব্বতীর স্তায় পিতৃকুলের কীৰ্ত্তিবর্জন করিবে। বাল্মীকি-রামায়ণ কৌশিকও জনকের প্রার্থনায় সম্মত হইলেন, তখন রাজা জনক মহারাজ দশরথকে যথাযথ বৃত্তান্ত জ্ঞাপন করিয়া আনয়ন করিবার নিমিত্ত দূতগণকে পত্ৰ দিয়া পাঠাইয়া দিলেন। ২১-২৭ অষ্টষষ্টিতম সর্গ জনকের আদেশক্রমে দূতগণ গমন করিল। যাইতে যাইতে তাহদের বাহনসকল ক্লান্ত হইয়া পড়িল, অবশেষে পথে তিন রাত্রি অতিবাহিত করিয়া অযোধ্যাপুরতে প্রবেশ করিল। তাহার রাজপুরীতে প্রবিষ্ট হইয়া “আমরা মিথিলাপতি-প্রেরিত, রাজদর্শন করিতে ইচ্ছা করি।” এইরূপ দ্বারপালদিগকে জানাইলে, দ্বারপালগণ অবিলম্বে তাহাদিগকে মহারাজের নিকট লইয়া গেল। তখন দূতগণ দেখিল, বৃদ্ধ নৃপতি শরথ দেবতার নায় শোভা পাইতেছেন। দূতগণ দৰ্শনমাত্রে কৃতাঞ্জলিপুটে নির্ভয়ে বিনয়নমবাক্যে বলিতে লাগিল, মহারাজ ! মিথিলাধিপতি অগ্নিহোত্রী জনক, উপাধ্যায় ও পুরোহিতগণের সহিত সস্নেহবাক্যে আপনাকে বারংবার অনাময় জিজ্ঞাসা করিয়াছেন এবং কুশলপ্রশ্ন জিজ্ঞাসার পর বিশ্বামিত্রের অনুমতানুসারে আপনাকে এই কথা বলিয়াছেন। যিনি হরধনু ভঙ্গ করিবেন, তিনিই সীতার পরিণেতা হইবেন, আমি এইরূপ প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম, এ জন্য নানা দেশীয় নৃপতিগণ উপস্থিত হইয় অকৃতকাৰ্য্য হইয়াছেন। এক্ষণে আপনার পুত্র রামচন্দ্র বিশ্বামিত্রসমভিব্যাহারে যদৃচ্ছাক্রমে এই স্থানে আগমন করিয়া সেই দিব্য হরধনু ভঙ্গ করিয়াছেন। সর্বজন-সমক্ষে এই অদ্ভুত ব্যাপার সম্পাদিত হইয়াছে। আমি এক্ষণে রামচন্দ্রকে সীতা সম্প্রদান করিয়া পূর্বকৃত প্রতিজ্ঞ হইতে উত্তীর্ণ হইতে ইচ্ছা করি, আপনি এ বিষয়ে অনুমতি প্রদান করেন, ইহা আমার অভিপ্রায় । হে মহারাজ ! আপনি এক্ষণে উপাধ্যায় ও পুরোহিতগণকে