পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ St J ক্ষেত্রে রামকে কতদূর দোষী করিতে পারিতাম, বলিতে পারি না। যাহা হউক, এক্ষণে রামায়ণ হইতে আমরা কি উপদেশ লাভ করিতে পারি, তাহার একটু আভাস দেওয়া প্রয়োজন মনে করি, এবং তাহাতেও কবির শক্তির সীমাবধারিত হইতে পারিবে, আমাদের বিশ্বাস । অলঙ্কার গ্রন্থে প্রকাশ ;— “রামাদিবৎ প্রবৰ্ত্তিতবাং ন তু রাবণাদিবৎ।” রামের অনুসরণে আমাদের চল কৰ্ত্তব্য, রাবণাদির অনুবৰ্ত্তী হওয়া উচিত নহে। এক্ষণে রামের কার্য্য-সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ পর্য্যালোচনা করা কৰ্ত্তব্য । মহর্ষি বাল্মীকি রামকে সৰ্ব্বগুণের আাধার, সকলের প্রিয় ও অমানুষী প্রকৃতিতে সজ্জিত করিয়াছেন। দেখুন, মাতা কৌশল্যার অনুরোধ, অনুগত ভ্রাতা লক্ষণের নির্ববন্ধাতিশয়, সীতার প্রার্থনা, পুরবাসী জনগণের নিষেধ, এমন কি, মহারাজ দশরথেরও আকাঙ্ক্ষা, এ সমস্ত পরিত্যাগ করিয়া, উপস্থিত রাজ্যাভিষেকে জলাঞ্জলি দিয়া, তিনি অবিকৃতমনে জটাবষ্কল পরিধানে বনবাসী হইলেন । পিতৃসত্যপালনই তাহার মূলমন্ত্র ও প্রধান ধৰ্ম্ম হইয়া উঠিল, তাহার নিকটে তিনি সকলই সামান্য বলিয়া মনে করিলেন । র্তাহার কেবল এই উক্তি “রামো দ্বির্নাভিভাষতে।” “রাম কোনও কথায় দ্বিরুক্তি করেন না। কৈকেয়ীর চরিত্র এতদূর অঙ্কিত হইয়াছে যে, যেন তাহা হইতেই বিমাতৃশব্দই বিলক্ষণ শক্তিসম্পন্ন হইয়াছে। পুরুষে—বিশেষ বৃদ্ধবয়সে স্ত্রৈণ হইলে যে কি দুৰ্গতি হয়, কৈকেয়ীর উক্তি ও কাৰ্য্য এবং তন্নিবন্ধন পুত্ৰশোকে দশরথের প্রাণত্যাগ, এই ঘটনার চূড়ান্ত নিদর্শন। নীচ এবং পরশ্ৰীকাতর জনের মন্ত্রণায় যে ইষ্টসিদ্ধি হয়, মন্থরার প্রকৃতি তাহার পরিচয়স্থল। যাহারা জীবমাত্রকেই শ্রদ্ধা করিয়া থাকেন, র্তাহাদের মহত্ত্বের সীমা থাকে না, এই জন্যই নিষাদাধিপতি গুহের সহিত রামের মিত্ৰতা । 顧 এক্ষণে লক্ষণের চরিত্র একবার অনুসন্ধানের প্রয়োজন। যদি পরিচয় জানিবার স্ববিধা না থাকিত, তাহা হইলে কে লক্ষণকে বৈমাত্রেয় ভ্রাত বলিয়া জানিতে পারিত ? অদ্যাপি দুই ভ্রাতার ঘনিষ্ঠ সৌভ্রাত্র দেখিলে লোকে বলিয়া থাকে, যেন রামলক্ষণ !’ অর্থাৎ ইহাদের আকৃতিগত ভিন্নত ভিন্ন কাৰ্য্যতঃ বৈষম্য ছিল না। ভাই বনবাসী, স্বতরাং লক্ষণুও তদনুবর্তী ; রাম বারংবার নিষেধ করিলেও লক্ষণ ও পক্ষে অবাধ্য হইলেন । আহার, নিদ্রা, ভোগ, এ সমস্ত বিসর্জন দিয়া, ছায়ার স্থায় অনুবর্তী হওয়া, এরূপ ভ্রাতৃভাব কি আর দেখিতে পাওয়া যায় ? লোকে এবং ক্ৰোধোদয়েও গুরুলোকের প্রতি অসম্মান বাক্য প্রয়োগ করিয়া থাকে, কিন্তু লক্ষণকে রাম বা সীতার প্রতি এক দিনের জন্য ব্যবহার-বিরুদ্ধ আচরণ বা অন্যায় উক্তি প্রয়োগ করিতে দেখা যায় নাই। রামও ভ্রাতা লক্ষণকে সেইরূপ দেখিতেন। উভয়ের ব্যবহার সমান नां হইলে, মনের মিল বা আনুগত্য ঘটবে কেন ? লোকব্যবহার, দর্পণে মুখ দেখার স্যায় ; তুমি যদি আমার নিকট হইতে ভালবাসা চাও, তবে অগ্ৰে ভালবাসা দিতে হইবে। লক্ষণ শক্তিশেলে নিপতিত, তাহার এরূপ অবস্থা দর্শনে রামের অন্তঃকরণ কতদূর ব্যথিত হইয়াছিল এবং তৎকালে তিনি কিরূপ শোকতাপ করিয়াছিলেন, এ স্থলে প্রমাণস্বরূপে মহৰ্ষির উক্তি উদ্ধৃত করিয়া দেওয়া গেল ;– 曾 “বিজয়োহপি ছি মে শুরু ন প্রিয়ায়োপকল্পতে"। আচক্ষুধিবষয়শ্চন্দ্রঃ কাং প্রীতিং জনয়িন্ততি । কিং মে যুদ্ধেন কিং প্রাণৈযুদ্ধকাৰ্য্যং ন বিদ্যন্তে। যত্রায়ং নিহত শেতে রণযুদ্ধান লক্ষণ ।