পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У be পাইয়া নাথবান হইবে। আমি অল্পই পৃথিবীকে এই পরমমঙ্গলের দ্বারা সংযুক্ত করিব এবং রামকে যৌবরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়া মনের ক্লেশ পরিহার করিব। যদি আমার এই প্রস্তাব তোমাদের অনুকূল হয়, তবে তোমরা ইহা অনুমোদন কর। যদি তোমাদের নিকটে আমার এ প্রস্তাব গ্ৰীতিকর বিবেচিত না হয়, তাহ হইলে, এতদপেক্ষ যাহা হিতকর, তদ্বিষয়ে পরামর্শ দিবে ; কারণ, মধ্যস্থ লোকের চিন্তা, পূর্বপক্ষ ও উত্তরপক্ষ বিবেচনায় ফলোপধায়িনী হইয়া থাকে। ১-১৬ নীলমেঘ দর্শনে ময়ূর যেরূপ আনন্দিত হয়, তাহার স্যায় নৃপগণ সন্তুষ্টমনে মহারাজ দশরথের এই প্রস্তাব গ্রহণ করিলেন। তখন সভামধ্যে সামন্ত নৃপতিগণের হর্ষধ্বনি উচ্চারিত হইল ; সমস্ত লোকদিগের আন্দোলনে অবনী যেন প্রকম্পিত হইল। অনন্তর দ্বিজাতিগণ ও সেনাপতি সকল পৌর ও জনপদগণের সহিত ধৰ্ম্মজ্ঞ নৃপতির অভিপ্রায় ও রাজাকে বৃদ্ধ অবগত হইয়া এই মন্ত্রণা করিলেন এবং রাজাকে কহিলেন,—মহারাজ ! আপনার বহু সহস্র বর্ণ বয়স হইয়াছে,আপনি এক্ষণে বৃদ্ধ হইয়াছেন, অতএব আপনি অধুনা রামচন্দ্রকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করুন। আমরা মহাবীর রামকে প্রকাণ্ড হস্তীতে আরূঢ় ও তদীয় আনন ছত্রাবৃত দেখিতে অভিলাষী হইয়াছি। ১৭-২২ তখন নৃপতি র্তাহাদের মনোগত ভাব বুঝিয়া যেন কিছুই বুঝিতে পারেন নাই, এইরূপ ভাবে প্রশ্ন করিলেন,—তোমরা আমার প্রস্তাবে রামকে যে যৌবরাজ্যাভিষিক্ত করিতে সম্মত হইয়াছ, তাহাতে আমার মনে একটি সন্দেহ জন্মিয়াছে ; অতএব তোমাদের অভিপ্রায় স্পষ্টাক্ষরে নির্দেশ কর। আমি জীবদ্দশায় যখন ধৰ্ম্মানুসারে রাজ্য পালন করিতেছি, তখন কি কারণে রামকে রাজা করিতে তোমাদের প্রবৃত্তি হয় বল ? তখন নৃপগণ পৌর ও জানপদগণের সহিত বলিতে লাগিলেন, মহারাজ ! আপনার পুত্র রামচন্দ্রের নানাপ্রকার রাজেচিত সদগুণ দেখিতে বাল্মীকি-রামায়ণ Q পাওয়া যায়। আমরা আপনার নিকটে সেই অমিতগুণশালী রামের গুণকীৰ্ত্তন করিতেছি, এবণ করুন। রামচন্দ্র দিব গুণে ইন্দ্রতুল্য, তিনি সত্যপরাক্রম, তিনি আপনার গুণপ্রভাবে পূর্বপুরুষ ইক্ষ্মাকু প্রভৃতি রাজগণকেও পরাস্ত করিয়াছেন। রামচন্দ্র পুরুষোত্তম, সত্যপরায়ণ ও সত্যস্বরূপ : ধৰ্ম্ম ও অর্থ তাহাতেই প্রতিষ্ঠিত হইয়া আছে। তিনি প্রজাপালনে চন্দ্রতুল্য, ক্ষমাগুণে ক্ষেীণীসদৃশ, বুদ্ধিতে বৃহস্পতিকল্প, এবং বীর্ঘ্যে সাক্ষাৎ শচীপতিসদৃশ। তিনি জিতেন্দ্রিয়, সুশীল, অমুযাশূন্য, ধৰ্ম্মজ্ঞ, ক্ষমাবান, সত্যসন্ধ, শান্ত, সান্তনাদাতা, প্রিয়ম্বদ ও কৃতজ্ঞ। তিনি প্রিয়দর্শন, মৃত্যু, স্থিরচিত্ত, প্রিয়বাদী ও সত্যভাষী। সেই রামচন্দ্র জ্ঞানবৃদ্ধ ব্রাহ্মণদিগকে সেবা করিয়া থাকেন। এই সকল গুণপরম্পরায় তদীয় কীৰ্ত্তি, যশ ও তেজ বৰ্দ্ধিত হইতেছে । সুরাসুর-মনুষ্য-লোকের সমস্ত মন্ত্র র্তাহার অধিকৃত, তিনি সমগ্র বিদ্যায় পারদর্শী ও ষড়ঙ্গ বেদে বুৎপন্ন । গন্ধৰ্ব্ববিদ্যাসঙ্গীতাদিতে র্তাহার প্রগাঢ় ব্যুৎপত্তি ; সেই মহামতি উভয়বংশবিশুদ্ধ, আদানস্বভাব, সাধুব্রত, বহুশ্রুত, ধৰ্ম্মার্থ-নিপুণ । ব্রাহ্মণগণ তাহার ধৰ্ম্মোপদেষ্ট, তিনি যুদ্ধার্থে লক্ষণের সহিত যখন গ্রাম বা নগরে যাত্র করেন, জয়লাভ না করিয়া নিবৃত্ত হয়েন না। তিনি যখন রথারোহণে বা গজপৃষ্ঠে যুদ্ধ হইতে প্রতিনিবৃত্ত হন, তখন পথিমধ্যে স্বজনের ন্যায় পুরবাসীদিগের কুশল জিজ্ঞাসা করিয়া থাকেন। তিনি তাহাদের প্রত্যেকের পুত্র, পরিবার, ভূত্য, শিষ্য ও অন্তরঙ্গসম্বন্ধীয় সমস্ত সংবাদ আনুপূর্বিবক জিজ্ঞাসা করেন। পিতা যেমন ঔরস পুল্লের নিকট কুশল প্রশ্ন করেন, তদ্রুপ “আপনাদের শিষ্যগণ একাগ্রচিত্তে আপনাদের শুশ্ৰুষা করে ত?” এইরূপ সেই পুরুষশ্রেষ্ঠ রাম সর্বদা আমাদিগকে জিজ্ঞাসা করেন ; বিশেষ করিয়া আমাদিগকে প্রশ্ন করেন। তিনি লোকের উৎসব বা বিপদের সময় সংবাদ লইয়া থাকেন এবং তাহাদের অভু্যদয়ে আনন্দিত ও বিপদে অবসন্ন হয়েন।