পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

?) ebo সৰ্ব্বনাশ উপস্থিত, তুমি কি জানিতেছ না যে, প্রবল দুঃখসমূহ তোমাকে পীড়িত করিতেছে ? মহারাজ তোমাকে দেখিতে পারেন না ; তবে কেন তুমি সৌভাগ্যে স্ফীত হইয়া থাক ? দেখিতেছি, তোমার সৌভাগ্য গ্রীষ্মকালে রবিকিরণতপ্ত নদীস্রোতের ন্যায় ক্ষণস্থায়ী। অসাধুদর্শিনী মন্থর সক্রোধে এরূপ রূঢ় বাক্য কহিলে, কৈকেয়ী অত্যন্ত বিষাদ প্রাপ্ত হইলেন । ১২-১৬ তদনন্তর জিজ্ঞাসা করিলেন, প্রিয়ালুচরি ! তোমার কি কোনও অশুভ ঘটিয়াছে ? আজ তোমাকে নিতান্ত বিষণ্ণ ও অতিশয় দুঃখিত দেখিবার কারণ কি ? সুচতুরা মন্থর কৈকেয়ীর মধুময় বাক্য শ্রবণ করিয়া ক্রোধে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। সে বাহাকারে অধিকতর বিষণ্ণভাব দেখাইয়া—রাজ্য পরহস্তগত হইতেছে ইত্যাদি বলিয়া কৈকেয়ীকে বিষাদ প্রাপ্ত করাইয়া এবং রামের প্রতি বিদ্বেষভাব সমৃৎপাদনের জন্য পূর্বের ন্যায় ক্রোধভরে কহিল, হে দেবি ! চিরকালের জন্য তোমার ঘোর সর্বনাশ সমুপস্থিত। মহারাজ রামকে রাজ্যভার প্রদান করিতেছেন। আমি তোমার হিতৈর্ষিণী, অকস্মাৎ এই ব্যাপার জানিতে পারিয়া যুগপৎ দুঃখ, শোক ও ভয়ে আক্রান্ত হইয়াছি, আমার সর্বাঙ্গ দগ্ধপ্রায়। বলিতে কি, তোমার বিপদ হইলে আমারও বিপদ ঘটিবে ; তোমার.সুখদুঃখে আমার মুখতুঃখ । তুমি রাজবংশে জন্মিয়াছ এবং রাজার মহিষী। কেন রাজধর্মের ক্ররত বুঝিতে পার নাম? ১৭-২৩ তোমার স্বামী মুখে ধৰ্ম্ম-কথা বলেন, কিন্তু কাৰ্য্যে তিনি বিলক্ষণ শঠ। তাহার মুখে মিষ্টতা, কিন্তু হৃদয় নিদারুণ । তুমি তাহাকে শুদ্ধস্বভাব জান বলিয়া তোমার এই বিপদ। তোমার স্বামী কতকগুলি মনোমুগ্ধকর কথা বলিয়া তোমায় তুষ্ট করেন, প্রকৃতপ্রস্তাবে কৌশল্যার মনোবাঞ্ছা অন্ত পূর্ণ করিবেন। ঐ দুষ্টাত্মা নরপতি ভরতকে মাতুলভবনে বাল্মীকি-রামায়ণ পাঠাইয়া দিয়াছেন; এক্ষণে এই নিষ্কণ্টক রাজত্ব কল্য প্রাতঃকালে রামকে দিতে প্রস্তুত হইয়াছেন। হে বালে! পতিব্যপদেশে সৰ্পের ন্যায় ক্রর শক্রকে মাতৃস্নেহে পোষণ ও অঙ্গে ধারণ করিয়াছ। শক্রকে বা সপকে উপেক্ষা করিলে যেরূপ হয়, তাহার স্যায় দশরথ-হস্তে তোমার ও তোমার পুত্রের সেই দশা ঘটিল। তুমি পাপাত্মা সেই নৃপতির বৃথা সাস্তুনায় মুগ্ধ হইয়াছ। রামকে রাজা করিয়া সপরিবারে তোমার বধসাধন করাই তাহার উদ্দেশ্য। হে মুগ্ধস্বভালে ! এখনও সময় আছে ; অতএব যাহাতে আপনি রক্ষণ পাও, পুত্রের উপায় হয় এবং আমিও বঁচি, এরূপ অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হও । ২৪-৩০ সুন্দরী কৈকেয়ী প্রিয় পরিচারিকার কথায় শরৎকালীন চন্দ্রকলার ন্যায় প্রফুল্ল হইয়া হাসিতে হাসিতে গাত্রোথনি করিলেন । তিনি রামের অভিষেক-বাৰ্ত্তা শ্রবণে সাতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া মন্থরাকে পারিতোষিকস্বরূপ দিব্যালঙ্কার প্রদান করিলেন এবং তাহাকে পুনববার কহিলেন,—হে মস্তরে ! তুমি অদ্য আমাকে কি মুখের সংবাদ শুনাইলে ! বৰ্ত্তমানে আমার নিকটে এমন কোনও দ্রব্য দেখি না, যাহা প্রদান করিলে এই সংবাদের অনুরূপ হইতে পারে। আমি গর্ভজাত পুত্র ভরত ও কৌশল্যানন্দন রামকে ভিন্ন জানি না, অতএব মহারাজ যখন রামকে রাজা করিতেছেন, ইহাতে আমার বিশেষ সন্তোষ । বলিতে কি, রামরাজ্যাভিষেক-সংবাদ অপেক্ষ প্রীতিপ্রদ বাক্য আর কিছুই নাই ; যাহা হউক, প্রতিদানযোগ্যপত্রি ! মন্থরে! যদি এই পারিতোষিক অপেক্ষ তোমার অন্য কিছু প্রার্থনীয় থাকে, বল, এখনই তোমাকে তাহা প্রদান করিতেছি । ৩১-৩৬