পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ১৬ ] দেশে দেশে কলরাণি দেশে দেশে চ বান্ধবাঃ । তন্তু দেশং ন পশ্যামি যত্র ভ্রাতা সহোদরঃ ॥” যুদ্ধকাণ্ড । ১০২ ৷ ৯ ৷ ১০ । ১৪ । তাৎপর্যা,-“হে শূর। রণে জয়লাভও আমার প্রীতিকর বোধ হইতেছে না ; কারণ, চন্দ্রকে যদি চক্ষুদ্বর্ণর দর্শন করিতে না পারা যায়, তাহা হইলে র্তাহাতে কি সন্তোষ ঘটিবে ? যখন ভ্রাতা লক্ষণ রণভূমিতে নিহত হইয়া শয়ন করিয়া আছেন, তখন আমার যুদ্ধ বা জীবন-ধারণে প্রয়োজন কি ? দেশে দেশে কলত্র বা বন্ধুবান্ধব মিলিতে পারে, কিন্তু এরূপ দেশ দেখিতে পাওয়া যায় না, যেখানে সহোদর ভ্রাতা সুলভ ।” এরূপ সৌভ্রাত্রের দৃষ্টান্ত কি আর দেখা যায়। রামলক্ষণ ভিন্ন এরূপ ভ্রাতৃভাব কি অপরে সস্তবে ? এরূপ উক্তির কি মূল্য হইতে পারে? আমরা সামান্য বিষয়লালসায় অন্ধ হইয়া স্নেহাস্পদ সহোদরকে বিসর্জন দিই, কিন্তু লক্ষণ বৈমাত্রেয় হইয়াও রামকাৰ্য্যামুরোধে ধরাশায়ী । পাঠক ! সীতার সদয় ভাব ও মহত্ত্ব পরীক্ষার জন্য অন্যত্র দৃষ্টিপাত করুন। দেখুন, রাবণবিনাশবসানে রামের আদেশে রামভক্ত হনুমান অশোকবনে প্রবেশ করিয়া, এই শুভ সংবাদ প্রদানের পর, সীতাকে কৰিলেন,—“দেবি । দুৰ্ব্বত্তা রাক্ষসীগণ রাবণের আজ্ঞায় তোমার প্রতি তর্জন-গর্জন ও নানাপ্রকার পীড়ন করিয়াছে ; অতএব অনুমতি হয় ত, আমি উহাদিগকে শমন সদনে প্রেরণ করি। সীতা নিষেধ-পূর্বক তদুত্তরে বাহা বলিয়াছেন, তৎপ্রতি একবার দৃষ্টিপাত করুন – “ভাগ্যবৈষম্যদোষেণ পুরস্তাদ ফতেন চ। মরৈভৎ প্রাপ্যতে সৰ্বং স্বকৃতং হ্যপভূক্ষ্যতে ॥ মৈবং বদ মহাবাহো দৈবী হেযা পরা গতিঃ । "প্রাপ্তব্যস্ত দশাযোগান্মতৈদিতি নিশ্চিতম।” যুদ্ধকাও । ১১৫ । ৪০ । ৪১ ৷ তাৎপর্য্য,—“আমার জন্মান্তরীণ দুষ্কৃতি ও দুর্ভাগ্যনিবন্ধন আমাকে স্বকৃত ফলভোগ করিতে হুইয়াছে। তুমি রক্ষেীরাজপরিচারিকাদিগকে বধ করিবার যে প্রস্তাব করিয়াছ, ও কথা বলিও না, হে মহাবাহো ! দৈবগতি যাহা নিৰ্দ্ধারিত আছে, তাহা খণ্ডন করা কাহার সাধ্য ? সুতরাং দশাযোগে আমাকে ইহা অবশ্যই ভোগ করিতে হইবে।” কি অলৌকিক মহত্ত্ব । দৃষ্টান্ত ! যাহা হউক, এ স্থলে রাবণের চরিত্র সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ পৰ্য্যালোচনা করা যাউক । কোনও কোনও গ্রন্থে প্রকাশ, রাবণ এক জন ভক্ত, দ্বেষভাবে বৈরিতায় উদ্ধার পাওয়াই তাহার উদেশ্য। কেহ কেহ রাবণের কার্য্যকলাপ দর্শনে তাহাকে বর্বর্বর, অত্যাচারী, অধাৰ্ম্মিক ও লোককণ্টক বলিয়া থাকেন। আমাদের মতে এবং বিভীষণ-মুখে বাল্মীকির উক্তিতে, রাবণ এক জন স্থপণ্ডিত, শাস্ত্রজ্ঞ, কৰ্ম্মী, বেদান্তবিৎ, কি দেবভাবময় নীতিজ্ঞ ও বিক্রান্ত বলিয়া পরিচিত। প্রমাণস্বরূপে উদ্ধৃত হইল ঃ– “এযোইহিতাগ্নিশ্চ মহাতপাশ্চ বেদান্তগঃ কৰ্ম্মস্থ চাগ্র্যশূরঃ। এতত্ত্ব যৎপ্রেতগতস্ত কৃত্যং তৎ কৰ্ত্ত মিচ্ছামি তব প্রসাদাৎ ” তাৎপৰ্য্য, “এই রাৰণ অগ্নিহোত্রী, মহাতপা, বেদান্তবিং, কৰ্ম্মী এবং বীরচুড়ামণি। এক্ষণে ইহার প্রেভাবস্থায় বাহা কৰ্ত্তব্য, আপনার অনুমতি পাইলে, করিতে ইচ্ছা করি।” বাহা হউক, সহস্র গুণ থাকিলেও যেরূপ “দারিদ্র্যদোৰো গুণরাশিনালী” - এই যে একটি মহাবাক্য শুনিতে পাওয়া বায়, রাবণের পক্ষেও সেইরূপ নানাবিধ গুণসমাবেশ থাকিলেও অত্যাচার,